আহমাদুল কবির, বিশেষ প্রতিনিধি:
পুলিশ পাহারায় পাসপোর্ট বিতরন করছে মালয়েশিয়ার ক্লাং পোষ্ট অফিস। বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে নবায়নকৃত পাসপোর্ট নিতে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পর্কে গণ অভিযোগের কারণে সাউথ ক্ল্যাং পুলিশ ১৫ সেপ্টেম্বর (আজ) সকালে পোস্ট অফিস, ক্ল্যাংয়ে শর্তাবলী নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পাসপোর্ট বিতরণ করছে পোষ্ট অফিস।
১৪ সেপ্টম্বর পোষ্ট অফিসে পাসপোর্ট নিতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশিদের দীর্ঘ লাইনের একটি ভিডিও আপলোড হওয়ার পর অবস্থাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সাউথ ক্ল্যাং ওসিপিডি অ্যাসিস্ট কম শামসুল অমর রামলী বলেন, ১৪ সেপ্টেম্বর পুলিশ স্টেশন ডাকঘরের ম্যানেজারের কাছ থেকে একটি ফোন পেয়েছিল। ফোনে বলাহয় ডাকঘরের বাইরে বিদেশীদের একটি বড় দল জড়ো হয়েছে। নির্ধারিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতিতে (এসওপি) এবং শারীরিক দূরত্ব পালন করছেনা। এর আলোকে পুলিশ আজ থেকে কোভিড-১৯ মহামারী সংক্রমণ রোধে সরকার কর্তৃক জারিকৃত এসওপিএন পুরোপুরি মেনে চলছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য সাউথ ক্ল্যাং পুলিশ এখন থেকে সবসয় ক্ল্যাং পোস্ট অফিসের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এ দিকে গত বছরের মার্চ থেকে মালয়েশিয়া সরকার বিভিন্ন মেয়াদে মহামারি উত্তরণে চলছে বিধিনিষেধ। আর এ বিধিনিষেধের কারণে লোক সমাগমের উপরও জারি করা হয় কঠোর আইন। এমন পরিস্থিতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কথা চিন্তা করে দূতাবাস স্বশরীরে এসে পাসপোর্ট রিনিউ না করতে এবং একই সঙ্গে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা দিতে নোটিশ জারি করে। নোটিশে বলা হয়, রি-ইস্যু ফরম জমা দেওয়ার সময় অবশ্যই ব্যক্তিগত হোয়্যাটসঅ্যাপ নম্বর দিতে হবে। যাতে পাসপোর্ট জমা শেষে নিজ নিজ মোবাইলে মেসেজ দেওয়া হবে। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা দেওয়া কার্যক্রম শুরু হলেও একটি অনিশ্চয়তায় পড়েন বাংলাদেশিরা। এক থেকে তিন মাস বা তার অধিক সময় চলে গেলেও ব্যক্তিগত মোবাইলে মেসেজ তো দূরের কথা অনলাইনে নামও পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে মালয়েশিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় দূতাবাসে এসে পাসপোর্ট সংগ্রহ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। দূতাবাসেও বাড়তে থাকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সব বিষয় বিবেচনা করে প্রাথমিক অবস্থায় মোবাইল কলের মাধ্যমে পরবর্তীতে অনলাইনের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রবাসীরাই অনলাইন সেবা বুঝতে না পারায় পাসপোর্ট দূতাবাসে এসেছে কি না বা কীভাবে আবেদন করতে হয় এসব বিষয়ে জটিলতার মধ্যে পড়েন। অন্যদিকে বন্ধ করে দেওয়া হয় সরাসরি দূতাবাসে এসে পাসপোর্ট সংগ্রহ করা। চালু করা হয় পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট বিতরণ।
অনলাইনের মাধ্যমে সঠিক প্রক্রিয়ায় আবেদন সম্পন্ন করার পর পাওয়া যায় কাঙ্ক্ষিত সোনার হরিণ নামক পাসপোর্ট। আর অনলাইন প্রক্রিয়াতে রয়েছে বেশকিছু ধাপ, যা পূরণে সাধারণ প্রবাসীদের ব্যাপক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। দূতাবাসে পাসপোর্ট এসে মাসের পর মাস পড়ে থাকলেও অনলাইনে পাসপোর্ট ডেলিভারি নম্বর না পাওয়ায় সময় মতো পাসপোর্ট পাচ্ছেন না অধিকাংশ বাংলাদেশি।
দূতাবাসের কড়া নিরাপত্তায় ভেতরে প্রবেশের সুযোগ হলেও কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তাদের আচরণ রহস্যজনক বলে অনেকে অভিযোগ তুলেছেন। নিজেদের সমস্যার সমাধান না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরছেন অনেকেই। কেউ বা বাধ্য হচ্ছেন দালাল ধরতে। আবার কেউ অভিযোগ করছেন টাকার বিনিময়ে দূতাবাসে না গিয়েও মিলছে পাসপোর্টসহ সব সেবা।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের সেবা নিশ্চিত করতে তিনটি নিবেদিত মোবাইল নম্বর চালু করেছে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস। গত ৪ আগস্ট মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসীদের জানানো যাচ্ছে যে, প্রবাসীদের জন্য হাইকমিশনের সেবা সহজে নিশ্চিত করতে তিনটি মোবাইল নাম্বার চালু করা হয়েছে। সেবা সংক্রান্ত যেকোনো প্রয়োজনে নম্বরগুলোতে নিম্ন নির্ধারিত সময়ে কল করে জানালে দ্রুত সময়ের মধ্যে হাইকমিশন ব্যবস্থা নেবে।
নম্বরগুলো হচ্ছে- পাসপোর্ট সংক্রান্ত প্রয়োজনে ০১০৪৩০৩১১০ ও ০১০৪৩০৩০২০, শ্রম ও কল্যাণ সংক্রান্ত প্রয়োজনে ০১১২৬২০৬৭০১।
সোমবার-শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এসব নম্বরে সেবার জন্য যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেছে হাইকমিশন। তাতেও মিলছেনা পাসপোর্ট সংক্রান্ত সুষ্ঠু সমাধান। অনেকে অভিযোগ করেছেন নিবেদিত তিনটি নাম্বারে ফোন করলে ফোন রিসিভ হচ্ছেনা। আবার অনেকে ফোন করলে কথাত হয়ইনি বরং যে ফোন করে তার টাকা কেটে নিচ্ছে মোবাইল অপারেটর।
এমন পরিস্থিতে দ্রুততম সময়ে পাসপোর্ট সমস্যা সমাধানের আহবান জানিয়েছেন প্রবাসীরা। কারন পাসপোর্টের জটিলতা সমাধা না হলে বৈধতার সুযোগ হারাবে হাজার হাজার প্রবাসী।