বিজয়ী জো বাইডেন

কালের কলম
4 Min Read

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। বস্তুত ঝুলে থাকা রাজ্য পেনসিলভানিয়ায় জয় পেয়ে হোয়াইট হাউসের দরজা খুলে যায় বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের জন্য। এ রাজ্যের ২০টি ভোট যোগ হওয়ায় জো বাইডেনের ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট দাঁড়ায় ২৮৪ টিতে।

উল্লেখ্য, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একজন প্রার্থীর জয়ের জন্য প্রয়োজন ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট। পরে অবশ্য নেভাদাতেও জয় পান বাইডেন; এর ফলে অন্য আরও তিন রাজ্যে ভোট গণনাকালীন জো বাইডেনের প্রাপ্ত ইলেক্টোরাল ভোট গিয়ে ঠেকে ২৯০টিতে।

অন্যদিকে এ সময় পর্যন্ত বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইলেক্টোরাল ভোট ছিল ২১৪টি।

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অভিনন্দন বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে দু’দেশের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্ক আগামী দিনে আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং ব্যবসা-বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা সম্প্রসারিত হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। বিশ্ব নেতারাও অভিনন্দন জানিয়েছেন বাইডেনকে।

বস্তুত নির্বাচনের ফল ঘোষণা নিয়ে গত চার-পাঁচ দিন ধরে রুদ্ধশ্বাস সময় কাটছিল মার্কিনিদের। বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরও ছিল এদিকেই। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নানা অভিযোগ ও রিপাবলিকানদের নানা কার্যকলাপের ফলে উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এ অবস্থায় পেনসিলভানিয়ার ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন বাইডেন সমর্থকরা।

তারা রাস্তায় নেমে নেচে-গেয়ে আনন্দ প্রকাশের পাশাপাশি অভিনন্দন জানান নতুন রাষ্ট্রপ্রধানকে। তবে এ ফল মানতে পারছেন না ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা। ইতোমধ্যে আইনি লড়াইয়ের কথা জানিয়েছেন ট্রাম্পের একজন আইনজীবী। স্মরণ করা যেতে পারে, ট্রাম্প হচ্ছেন ১১তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যিনি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হলেন।

আমেরিকার এবারের নির্বাচনের এ ফলাফল বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ বলেই মনে হয়। মার্কিন জনগণও এ পরিবর্তন চেয়েছিল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মার্কিন নাগরিকরা সাধারণত অভ্যন্তরীণ বিষয়কেই বেশি গুরুত্ব দেয়। নির্বাচনে এর বড় প্রভাব পড়ে। জো বাইডেনের জয়ের পেছনে নিশ্চয়ই আরও অনেক কারণ আছে। বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা সেসব বিশ্লেষণ করবেন।

আমরা মার্কিন জনগণের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানাই। যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১০ লাখ বাংলাদেশি বৈধ বা অবৈধভাবে বসবাস করেন। ট্রাম্পের শাসনামলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না। আমরা আশা করব, যুক্তরাষ্ট্র যে একটি অভিবাসীর দেশ এবং তাদের অবদানেই দেশটি আজকের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, এ সত্য অনুধাবন করবেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এবং সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মাবলম্বী মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে তার প্রশাসন।

বিশ্বব্যাপী মার্কিন নীতির প্রভাব সর্বজনবিদিত। দেশটির ক্ষমতার পালাবদলে পররাষ্ট্রনীতিতে কী পরিবর্তন আসবে, বাইডেনের নেতৃত্বে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কেমন হবে- এটা এক বড় প্রশ্ন। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে রাতারাতি বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম।

দেশটির পররাষ্ট্রনীতি প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি পররাষ্ট্র বিভাগ, পেন্টাগন, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিল, সর্বোপরি কংগ্রেসের ভূমিকার ওপর নির্ভরশীল। এটি এক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। তবে এটিও প্রণিধানযোগ্য, নির্বাচনের আগে বাইডেনের বক্তব্যে বৈদেশিক সম্পর্ক সংক্রান্ত যেসব বিষয় স্থান পেয়েছে, তিনি সেসব বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন।

নতুন মার্কিন নেতৃত্বের এশিয়া, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়া নীতি কী হবে, আমরা তা দেখার অপেক্ষায় থাকব। আমরা চাইব, জো বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি বিশ্বশান্তির অনুকূলে ভূমিকা রাখবে।

Share This Article