মিথ্যা মামলায় পুলিশ সদস্যকে হয়রানির অভিযোগ

কালের কলম
4 Min Read

খুলনা প্রতিনিধি: 

স্কুল জীবন থেকে প্রেম। এমন প্রেমের মধ্যে ছেলের চাকরি হয় পুলিশে। চাকরিতে ট্রেনিংয়ে যাবার পর জানতে পারেন আরেক বখাটে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে রেস্টুরেন্টের বাথরুমে ‘আপত্তিকর অবস্থায়’ ধরা পড়েছেন তার প্রেমিকা। মন ভেঙে যায় সদ্য চাকরি পাওয়া পুলিশ সদস্যের। তবে ছুটিতে এসে তিনি পড়েন আরেক বিপাকে। ওই তরুণীর বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সাবেক প্রেমিকার দুই ভাই তাকে আটক করে জোর করে চেষ্টা করে বিয়ে দেয়ার। এতে ব্যর্থ হয়ে তাকে মারধরের পর ‘বিয়ে না করলে চাকরি খেয়ে দেয়ার হুমকি’ দিয়ে থানায় বানোয়াট মামলা করেন মেয়ের মা শাহনাজ পারভীন। পরে ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নিতে প্রস্তাবও দেন তিনি। এতে বিপাকে ওই তরুণ পুলিশ সদস্য ও তার পরিবার।

বানোয়াট ওই মামলার বাদী শাহনাজ পারভীন প্রতারক প্রেমিকা ইকরা চৌধুরীর মা। তিনি খুলনার খালিশপুরের গোয়ালখালী মেইন রোডের আরশি মসজিদ সংলগ্ন হান্নান সাহেবের বাড়ি এলাকার মৃত ইকবাল হোসেন চৌধুরীর স্ত্রী।

ভুক্তভোগী পুলিশ কনস্টেবল সোহান ঝিনাইদহ জেলা পুলিশে কর্মরত ছিলেন। মিথ্যা ওই মামলার পর পাওয়ার পর তাকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। বর্তমানে তিনি ছুটিতে রয়েছেন। তিনি খুলনা খালিশপুরের নতুন রাস্তার পাশের এলাকার বাসিন্দা।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্যের পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে খুলনার বিএন স্কুল এন্ড কলেজে এইচএসসি পড়ার সময় দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া পার্শ্ববতী এলাকার ইকরা চৌধুরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ভুক্তভোগী ওই যুবকের। এরইমধ্যে পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরি হলে ট্রেনিংয়ে চলে যান তিনি। সেখানে থাকতেই তার কাছ থেকে নিয়মিত টাকা হাতাতে থাকে ওই প্রতারক তরুণী। এরমধ্যে ট্রেনিংয়ে থাকাকালেই জানতে পারেন আরেক বখাটে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে রেস্টুরেন্টের বাথরুমে ‘আপত্তিকর অবস্থায়’ ধরা পড়ছেন প্রেমিকা। এ ঘটনা প্রকাশের পরে বখাটে প্রেমিক সটকে পড়লে মেয়েকে বিয়ে দিতে পুলিশ সদস্যকে চাপ দিতে থাকে ওই তরুণীর মা শাহনাজ পারভীন, মেঝ ভাই আরেফীন চৌধুরী তুষার ও ছোট ভাই মো. সিফাত চৌধুরী। এতে অস্বীকৃতি জানানোয় মেয়ের পরিবারের রোষানলে পড়েন তিনি।

ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্যের পরিবার জানায়, ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ছুটিতে বাড়িতে আসে সোহান। ১৬ সেপ্টেম্বর ওই তরুণীর দুই ভাই সড়ক থেকে ভুক্তভোগী যুবকের পথরোধ করে জোরপূর্বক বাড়িতে নিয়ে বোনের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এতে আপত্তি জানিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলে তাকে বেধড়ক মারধর করে তারা। এসময় তার মোটরসাইকেল, স্বর্ণের চেইন ও ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়। পরে মোটরসাইকেল ফেরত দেয়। এ ঘটনার পর গুরুতর আহত ভুক্তভোগী যুবককে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৩ দিন চিকিৎসার পর জ্ঞ্যান ফেরে তার। ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্যের পরিবারের অভিযোগ, ওই দিনের মারধরের ঘটনাকেই পরবর্তীতে ধর্ষণ চেষ্টা, মারধর ও আপত্তিকর ছবি রয়েছে এমন সাজিয়ে ভুক্তভোগীর নামে মামলা করেন তরুণীর মা। মামলায় ফেসবুকে পরিচয় বলে মিথ্যার আশ্রয় নেন তিনি। মামলা করার পরে ওই তরুণীর পরিবার ফোনে একাধিকবার ভুক্তভোগীর পরিবার ও ভুক্তভোগীকে হুমকি দিয়ে আসছে। এছাড়া ৭ লাখ টাকা দিলে মামলা তুলে নেয়ার প্রস্তাবনাও দেন মামলার বাদী শাহনাজ পারভীন।

ভুক্তভোগীর পুলিশ সদস্যের মা বলেন, মামলার ঘটনার পর আমার ছেলে ও বাদী মেয়ের মাকে সামনাসামনি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। সেখানে আমার ছেলে ওই মেয়ের মায়ের কাছে জানতে চায়, ‘সে (ছেলে) কার নম্বরে ফোন করতো? ওই ফোন কে রিসিভ করতো? ধর্ষণ চেষ্টার সময় কবে ও সেই সময় পরিবারের (মেয়ের) সবাই কোথায় ছিলো?’ এসব প্রশ্নের জবাবে শাহনাজ পারভীন কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি (শাহনাজ পারভীন) এতে বলেন, ‘আমিও তার (সোহানের) ফোন রিসিভ করেছি। ১৬ সেপ্টেম্বর শাহানাজ পারভীন বাসায় থাকলেও সোহানের বাড়িতে ঢোকা টের পাননি, এমনকি ধর্ষণ থেকে বাঁচাতে আসেন চিৎকারের খবর পেয়ে।’

তিনি বলেন, ‘এসব প্রশ্নের উত্তরেই পরিষ্কার আমার ছেলেকে বানোয়াট মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। হয় বিয়ে, না হয় চাকরিচ্যুত অথবা অর্থ হাতিয়ে নিতেই এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। আমার ছেলেকে এমনভাবে ফাঁসানোর বিষয়ে যথাযথ তদন্ত ও সুবিচার চাই আমি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই তরুণীর মা ও মামলার বাদী শাহানাজ পারভীনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

Share This Article
Leave a comment