আহমাদুল কবির :
‘মুজিব বর্ষের আহ্বান দক্ষ হয়ে বিদেশ যান, স্লোগানকে সামনে রেখে মালয়েশিয়ায় পালিত হল আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। যথাযত মর্যাদায় বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক এ দিবসটি পালন করা হয়। শুক্রবার মালয়েশিয়া সময় বিকেল ৩টায় এ উপলক্ষে দূতাবাসে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মালয়েশিয়া সরকারের চলমান বিধিনিষেধের কারনে দূতাবাসের ফেইসবুক পেজে লাইভে অংশ গ্রহণ করেন প্রবাসীরা। সভার শুরুতে সকল প্রবাসী ও দেশের উন্নতি কামনা করে মেনাজাত করা হয়। সভায় রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন ডেপুটি হাইকমিশনার ও মিনিস্টার মো: খোরশেদ আলম খাস্তগীর, প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন লেবার কাউন্সিলর (২) মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডল, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন কাউন্সিলর (বাণিজ্যিক) মোঃ রাজিবুল আহসান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার কাউন্সিলর মোঃ মশিউর রহমান তালুকদার এবং, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সচিবের বাণী পাঠ করেন দুতালয় প্রধান ও প্রথম সচিব রুহুল আমিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম সচিব (শ্রম) ফরিদ আহমেদ।
আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত গোলাম সারওয়ারের বক্তব্যের শুরুতে, স্বশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করেন দেশের পরাধীনতার গ্লানি মোচনে প্রাণ উৎসর্গ করা বীরসন্তানদের।
তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন। সেইসঙ্গে জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রদূত মোঃ গোলাম সারওয়ার প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে বলেন, পাসপোর্ট সেবা সহজীকরণ করার প্রক্রিয়া চলছে, আরো দ্রুত পাসপোর্ট প্রদান করা হবে যাতে বৈধকরণ প্রক্রিয়ার সুযোগ নিতে পারেন। করোনার মাঝেও দূতাবাস পাসপোর্ট বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে ইতোমধ্যে দূতাবাস ৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং আরো নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মালয়েশিয়া পোষ্ট অফিসের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে যাতে করে পাসপোর্ট মালয়েশিয়া দূরদূরান্তে কর্মরত কর্মীদের পাসপোর্ট পৌঁছে দিতে পারি।
এছাড়া ছুটিতে গিয়ে দেশে আটকে পড়া প্রবাসীরা ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও মেয়াদ বাড়াতে পারবে এবং সরাসরি মালিক ইমিগ্রেশন ডিজির বরাবর আবেদন করে প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। আটকে পড়া প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় বাধা হল করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি। ২য় ধাপে মালয়েশিয়া করোনা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। আশা করছি আগামী ৩১ শে ডিসেম্বরের পর এটি তুলে নেয়া হবে। তখন মালয়েশিয়া প্রবেশের কোন সমস্যা হবেনা।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের প্রবাসীদের মেধা, শ্রম ও দক্ষতা বিশ্বে প্রসংশিত। এ ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা সচেষ্ট আছি। প্রবাসীরা একইসাথে প্রবাসী দেশ এবং নিজ দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
মালয়েশিয়ায় অনিয়মিত বাংলাদেশি প্রবাসীদের কোন ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা আর্থিক লেনদেন না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মালয়েশিয়া সরকার রিক্যালিব্রেশন নামে অবৈধ কর্মীদের বৈধ করার প্রক্রিয়াটি পুরোটাই নিয়োগদাতা বা মালিক নির্ভর। সুতরাং কোন এজেন্ট, দালাল বা তৃতীয় পক্ষের কিছু করার সুযোগ নেই। ফলে কারো প্রলোভনে প্রতারিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত অভিবাসী দিবসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা এবং চলমান মহামারিতে মালয়েশিয়া সরকারের বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান জানান।
সভায় শ্রম কাউন্সিলর মোঃ জহিরুল ইসলাম শ্রম পরিস্থিতি সম্পর্কে তুলে ধরেন এবং তাৎক্ষণিক দুজন প্রবাসী বিল্লাল হোসেন এবং মোহাম্মদ বুলবুল হোসেন তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। জহিরুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা মালিক পরিবর্তন করার সুযোগ করে দিয়েছি এবং সফল হয়েছি। এই করোনা ভাইরাস সংক্রমনের মাঝে আমরা (দূতাবাস) কয়েক হাজার কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করেছি। বেতন বিহীন কর্মী যেন ছাটাই না করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে করোনার মাঝে দেশে ফেরত গেলেও মালয়েশিয়া থেকে একজনকেও কাজ হারিয়ে দেশে যেতে হয়নি।
বৈধতার জন্য কোন শ্রমিককে টাকা দিতে হবেনা। মালিক পক্ষ টাকা পরিশোধ করবে। কোন শ্রমিকদের ইমিগ্রেশন যেতে হবে না।
আলোচনা সভার আগে দুপুরে জালান বেছার আমপাংএ হাইকমিশনার পাসপোর্ট সার্ভিস সেন্টারে আগত সেবা প্রত্যাশীদের কথা শোনেন, তাদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের হাতে খাবার তুলে দেন।