স্বাস্থ্য ডেস্ক:
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে হাজার বছর ধরে অসাধারণ বটিকা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল। শরীর থেকে শুরু করে নানা উপাদেয় খাবার তৈরির মোক্ষম এ উপাদান এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে বিশ্বস্ততা ধরে রেখেছে। এই তেলের পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী উপাদান থাকায় এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা গুণাগুণে ভরপুর এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের এমন কিছু গুণ রয়েছে, যা চুল কিংবা ত্বকের যত্নে বাড়তি মাত্রা যোগ করতে সক্ষম। চলুন জেনে নেয়া যাক, অলিভ অয়েলের নানা উপকারিতা-
শিশুদের ত্বকের যত্নে:
জলপাই তেল ত্বকের যত্নে ভালো কাজ করে। শিশুর ত্বকেও নিরাপদ। শিশুদের নিতম্ব থেকে র্যাশ দূর করতে সামান্য অলিভ ওয়েল মাখিয়ে দিন। এছাড়া যাদের এলার্জি জনিত সমস্যা রয়েছে, তারা নির্দ্বিধায় এ তেল ম্যাসাজ করতে পারেন। অলিভ অয়েল অতিরিক্ত শুষ্ক, ছোপ ছোপ ত্বক কোমল ও মসৃণ করে।
হৃদযন্ত্রের সুস্থতায়:
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানো ও ক্যান্সার প্রতিরোধের পাশাপাশি হৃদরোগীদের জন্য অলিভ অয়েল খুবই উপকারী। সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুর্বল হার্টের জন্য জ্বালানি হিসেবে প্রয়োজনীয় চর্বির জোগান দেয় অলিভ অয়েল। এক্সট্রা ভার্জিন অয়েলের সঙ্গে রোজমেরি পাতার সংমিশ্রণে বানানো এই উপাদান হৃদযন্ত্রের জন্য বেশ উপকারী। ছোট একটি কড়াইয়ে দেড় কাপ এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল, ৮-১০টি শুকনা রোজমেরি পাতা, সামান্য সামুদ্রিক লবণ ও গোলমরিচ নিন। এরপর তাপ দিন যতক্ষণ না পর্যন্ত পর্যাপ্ত গরম হয়। কিছুক্ষণ পর চুলা থেকে নামিয়ে নির্যাসটুকু নিন এবং বোতলে সংরক্ষণ করুন। এরপর সালাদ, স্যুপসহ অন্যান্য পছন্দের খাবারের সঙ্গে ব্যবহার করুন।
কানের সমস্যায় জলপাই তেল:
যাদের কানের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই জলপাই তেল বা অলিভ অয়েল বিশেষ উপকার করে থাকে। কানের মধ্যে চুলকানি এবং গন্ধ হওয়া এমন বেশ কিছু সাধারণ সমস্যা অনেকেরই রয়েছে। কটন বার অলিভ অয়েলে ভিজিয়ে খুব সাবধানে কানের মধ্যে দিলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
রুক্ষ হাতকে মসৃণ রাখতে:
রুক্ষতা থেকে হাত মসৃণ রাখতে এক টেবিল চামচ করে এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল, অর্গানিক ঘি, চার ভাগের এক টেবিল চামচ ভিটামিন-ই অয়েল এবং ৫ থেকে ১০ ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েলের মিশ্রণ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ মিশ্রণ হাতের তালু, নখ হাতের ত্বকে মাসাজ করতে হবে।
নাক ডাকা বন্ধ করতে:
অলিভ অয়েল নাক ডাকা বন্ধ করতে সাহায্য করে থাকে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক চুমুক অলিভ অয়েল খেয়ে নিন। এটি আপনার গলার পেশীকে পিচ্ছিল করে থাকে এবং নাক ডাকা বন্ধ করে দেয়।
নিরাপদ শেভের উত্তম নিশ্চয়তা:
শেভ করার ক্ষেত্রে রাসায়নিক নানা উপাদানে তৈরি পণ্যের ব্যবহার বেড়ে গেছে। কিন্তু এর স্বাস্থ্যঝুঁকিও কম নয়। এক্ষেত্রে নিরাপদভাবে শেভের জন্য অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল শক্তিসমৃদ্ধ এমন তেল তৈরি করা যায়, যা দুশ্চিন্তামুক্ত থেকেই শেভের সময় ব্যবহার করা যায়। এ উপাদানটি তৈরির জন্য শুরুতে ছোট একটি প্লাস্টিকের পাত্রে আধা কাপ এক্সট্রা ভার্জিন অয়েলের সঙ্গে ৫-১০ ফোঁটা সিডারউড এসেনশিয়াল অয়েল যোগ করতে হবে। এরপর প্রয়োজনমত ব্যবহার করুন।
ডার্ক সার্কেল দূর করতে:
চোখের নিচে কালি পড়লে রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য অলিভ অয়েল মাসাজ করে নিন। পরদিন সকালে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে দূর হবে চোখের নিচের কালো দাগ।
ত্বকের যত্নে:
শরীরের কোনো স্থান কেটে গেলে বা আঁচড় লাগলে অলিভ অয়েল অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে ঘরে বসেই প্রাকৃতিকভাবে ওষুধ বানিয়ে নিতে পারেন। এজন্য প্রয়োজন হবে এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল, নারকেল তেল, ক্যালেনডুলা ও ল্যাভেন্ডার তেল, মোম, চা পাতা। এর মিশ্রণ দিয়ে বানানো ওষুধ বেশ উপকারে আসবে।
পা ফাটা সমস্যার সমাধান:
পায়ের দুরবস্থার কারণে কারও সামনে পা বের করতে বিব্রত হচ্ছেন? রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পায়ে অলিভ অয়েল মাসাজ করে নিন, তারপর মোজা পরে ঘুমান। সকালে নরম তুলতুলে পায়ে পছন্দের স্যান্ডেল গলিয়ে চলে যান গন্তব্যস্থলে।
ফুসকুড়ির সমাধানে:
চুলকানিসহ ত্বকের নানা সমস্যার সমাধানে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের ক্ষমতা বহু আগে থেকে প্রমাণিত। এক কাপ এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল, এক কাপ নারকেল তেল ও চার টেবিল চামচ মোম গরম পানিতে নিন। এরপর এতে যোগ করুন আট ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল, ছয় ফোঁটা লেমন এসেনশিয়াল অয়েল, চার ফোঁটা চা পাতার এসেনশিয়াল অয়েল। এরপর সবকিছু গলে গেলে তা মলম হিসেবে জারে সংরক্ষণ করুন।
ঠোঁটের স্ক্রাবার হিসেবে:
ঠোঁটে মরা চামড়া জমে কালচে দেখায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অলিভ অয়েল ও লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে ঘষুন। দূর হবে মরা চামড়া।
চুলের ক্ষতি ঠেকাতে:
চুলের সমস্যা সমাধানে অলিভ অয়েল দিয়ে বানানো নির্যাস ভালো বটিকা হিসেবে কাজ করে। এজন্য শুরুতে গরম পানিতে সামান্য এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল দিন। এরপর তা চুলের আগা থেকে গোড়ায় লাগান। ২০-৩০ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলুন।
ব্রণ প্রতিরোধক:
শুনে হয়ত অবাক হবেন ব্রণের চিকিৎসায় তেলের ব্যবহার। কিন্তু অলিভ অয়েল ব্রণের বংশ ধ্বংস করার জন্য উপকারী। ৪ টেবিল চামচ লবণের সাথে ৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। তারপর সেই পেস্ট ২ মিনিট ধরে মুখে মাসাজ করুন। এভাবে এক সপ্তাহ করুন। অবশ্যই পরিবর্তন দেখতে পারবেন।
সূত্র: কোরা বাংলা