আহমাদুল কবির, বিশেষ প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ হাই কমিশনকে সিস্টেমেটিক প্রবাসবান্ধব ননস্টপ সেবা কেন্দ্রে রূপান্তর করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি কর্মীসহ সকল অভিবাসীদের সমস্যার ইতিবাচক সমাধানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং সার্ভিসের উন্নয়নে যৌক্তিক পরামর্শ গ্রহণ করবেন বলে জানালেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দুপুরে কুয়ালালামপুরস্থ হাইকমিশনে নিজ দপ্তরে দেশটিতে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় কালে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, বিদেশে যে কোন দেশের মিশন পরিচালনা করে নিজ দেশের নাগরিকদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম কানুন অনুসরণ করতে হয়। এর মধ্যে করোনা মহামারী এসে নানান বিধি নিষেধের ফলে কাজকর্ম আশানুরূপ করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা সেবা নিশ্চিত করার গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছি, যা বহুল কাঙ্খিত ছিল। বাংলাদেশ সরকার প্রবাসীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে যৌক্তিক করনীয় ও তুলনামূলক ভালো সিদ্ধান্ত নিতে ও বাস্তবায়ন করতে সবসময় সমর্থন দিয়েছে। এমন কি করোনাকালে আয়হীন প্রবাসীদের খাবার সহায়তা দিয়েছে।
রেমিটেন্স পাঠানোর টাকায় প্রণোদনা দিয়েছে এবং সেটা বৃদ্ধি করেছে। আলাদা পাসপোর্ট সার্ভিস সেন্টার নেওয়া হয়েছে। পোস্ট মালয়েশিয়ার মাধ্যমে দূর দূরান্তে পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এটা বর্তমান সময়ে এবং বাস্তবতার নিরিখে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল এবং এখনও আছে। তথাপি দিনরাত পরিশ্রম করে শুধুমাত্র পোস্ট অফিসের মাধ্যমে গত এক বছরে ৩ লাখ নতুন পাসপোর্ট বিতরণ করেছি এবং সেটা অব্যাহত আছে। পাশাপশি বৈধকরনের সময় সীমা বিবেচনায় নিয়ে আমপাং থেকে সরাসরি পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। এই উভয় ক্ষেত্রেই দিন রাত পরিশ্রম করা কর্মী ভাইদের কথা বিবেচনা করে সুষ্টু পাসপোর্ট সার্ভিস নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।
ইতোমধ্যে কমিউনিটির ব্যাক্তিবর্গ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা নিয়োগকর্তাদের নিকট থেকেও পরামর্শ পাচ্ছি। দূরদূরান্তে পরিদর্শন করে পাসপোর্ট সেবা প্রত্যাশীদের মতামত আমরা সংগ্রহ করেছি তাতে দেখা গেছে পাসপোর্ট করতে কুয়ালালামপুরে না আসায় কর্মীদের অতিরিক্ত অর্থ, সময় সাশ্রয় হচ্ছে এবং ছুটি নিতে হচ্ছে না। অধিকন্তু পাসপোর্ট কেন্দ্রকে ঘিরে প্রতারণা ও হয়রানি হচ্ছে না। ইতোমধ্যে হাইকমিশনের যারা প্রবাসী কর্মীর সাথে সঠিক আচরণ করতে বা সেবা দিতে ব্যার্থ হয়েছে তাদেরকে ছাঁটাই করেছি। তাই হাইকমিশনের সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যকেউ যেন প্রবাসী কর্মীকে হয়রানি না করে সেদিকে লক্ষ্য আমাদের আছে এবং প্রবাসী হিতৈষী ব্যক্তিদেরকে অনুরোধ করব যেন নিজেদের দায়িত্ব থেকে হাইকমিশনকে সহযোগিতা করেন। একটি সঠিক পরামর্শ অনেক বেশি উপকারী।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মিনিস্টার (শ্রম) নাজমুস সাদাত সেলিম, ফার্ষ্ট সেক্রেটারি (শ্রম) এ এস এম জাহিদুর রহমান, পাসপোর্ট ও ভিসা উইং এর প্রথম সচিব মিয়া মোহাম্মদ কিয়াম উদ্দিন।
সাংবাদিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টিভির মালয়েশিয়া প্রতিনিধি আহমাদূল কবির, আর টিভির মোস্তফা ইমরান রাজু, বিজয় টিভি’র মালয়েশিয়া প্রতিনিধি আশরাফুল মামুন, সময় টিভির আঃ কাদের, এনটিভির কায়সার হান্নান এবং কালের কলমের সম্পাদক আরিফুল ইসলাম।
হাইকমিশনে ও কর্মকর্তাগণ সাংবাদিকদের বিভিন্ন পরামর্শ শোনেন। বিশেষ করে বিভিন্ন সময় প্রবাসী ও তাদের পরিবার দেশ থেকে নানান সমস্যা ও বিপদের কথা বলেন। সেগুলো তুলে ধরে সমাধানের পরামর্শ দেওয়া হয়। হাইকমিশনার এজন্য ধন্যবাদ জানিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রবাসে নিজ কর্মের পাশাপাশি সাংবাদিকতা করা কষ্টকর এবং সে কষ্ট সহ্য করে দেশে থাকা লক্ষ লক্ষ পরিবারকে সঠিক তথ্য তুলে ধরা গণমাধ্যমের পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করি। আপনদের মাধ্যমে প্রবাসী, প্রবাসী পরিবার এবং সমগ্র দেশ সঠিক ও বিভ্রান্তিহীন তথ্য পাবে এই আশা করি। তিনি বলেন তথ্য যেমন উপকার করে তেমনি বিভ্রান্তিকর তথ্য ক্ষতি করে। সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য অনুরোধ করেন।
উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতির মাঝেও মালিক পরিবর্তন, অবৈধ শ্রমিকদের বৈধকরণ, করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদান, কর্মী নিয়োগের চুক্তি সম্পাদন, বাণিজ্য বৃদ্ধি, এল এন জি চুক্তি সম্পাদন, এসব মালয়েশিয়ার সরকারের ইতিবাচক সুদৃষ্টির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করছে। হাসপাতাল এবং ডিটেনশন কেন্দ্রগুলিতে পরিদর্শন করতে এবং কনস্যুলার সার্ভিস প্রদান করতে দূতাবাসের অনুরোধগুলির প্রতি মালয়েশিয়া সরকার সব সময় ইতিবাচক সাড়া প্রদান করেছে।
বৈধকরন প্রক্রিয়ার মেয়াদ বাড়ানোর জন্যও সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। অপর দিকে বাংলাদেশসহ বিদেশি কর্মী নিয়োগে করোনা পরিস্থিতে কিভাবে কি করা হবে যেমন, টিকা, আগমন, করোনা টেস্ট, কোয়ারেন্টাইন ইত্যাদি বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকার ইতোমধ্যে বিশদ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। উভয় দেশের মধ্যে ওয়ার্কিং গ্রুপের এসব অর্থাৎ বাংলাদেশী কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও সুরক্ষাসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করা হবে।
তিনি মালয়েশিয়া সরকারকে ধনবাদ জানিয়ে বলেন, সম্প্রতি মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক আই এল ও সনদের ২৯ রেট্রিফাই করার জন্য যা কর্মীদের অধিকতর সুরক্ষা দিবে এবং মালয়েশিযা সরকার ও জনগণের আন্তরিকতার প্রকাশ করেছে।
করোনা পরিস্থিতিতে দুই দেশের অর্থনৈতিক, দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে কোনো বিরূপ প্রভাব যাতে না পড়ে এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের কোনো সমস্যা না হয় সবদিকে সতর্ক থেকে হাইকমিশন দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। তিনি বলেন মালয়েশিয়ায় অবস্থিত প্রতিটি বাংলাদেশের নাগরিকের উপর সুসম্পর্কের বিষয়টি দারুণভাবে জড়িত। মালয়েশিয়ার জনগণের সাথে সুসম্পর্ক অটুট রাখতে সকল প্রবাসী এবং ডায়াসপোরা বিশেষ ভূমিকা পালন করে, যা তিনি আশা করেন।
বাংলাদেশিদের যে কোনো পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য সরাসরি হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন হাইকমিশনার গোলাম সারোয়ার।