আহমাদুল কবির, বিশেষ প্রতিনিধি:
মালয়েশিয়ায় চলছে দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন। থেমে গেছে সব কিছু, কঠোর চেকিং এবং জিজ্ঞাসাবাদ পেরিয়ে ১০ কিলোমিটারের মধ্যেই করতে হচ্ছে চলাচল।
কেনাকাটা করতে সময় মাত্র দুই ঘণ্টা, সরকারি অফিসে মাত্র ২০ ভাগ এবং বেসরকারি অফিসে ৪০ ভাগ লোকবলের উপস্থিতিতে করতে হচ্ছে কাজকর্ম, সমাগম নিষিদ্ধ, বাসায় থেকে করতে হচ্ছে সব কাজ।
তবে নিত্য প্রয়োজনীয় এবং জীবন রক্ষাকারী পণ্য উৎপাদন, পরিবহন এবং সরবরাহ থেমে নেই। এক হিসেবে দেখাগেছে করোনাকালে রিস্কের মধ্যেও প্রবাসী কর্মীরা ফ্রন্ট লাইনে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে বাংলাদেশী কর্মীদের নিয়মানুবর্তিতা, সাহস এবং সেবা প্রশংসা কুড়িয়েছে।
কড়া লকডাউনের ৯ম দিন অতিবাহিত হচ্ছে আজ। আর এ লকডাউনের মাঝেও থেমে নেই বাংলাদেশ দূতাবাসের পাসপোর্ট ও কন্স্যুলার সেবা। করোনা আক্রান্ত হবার ঝুকিঁ নিয়েই চলছে সেবা।
দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, এই কঠোর লক ডাউনের মধ্যেও প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ জন পাসপোর্ট সেবা নিচ্ছেন। এ জন্য দূতাবাসে আসার আগে অন্যান্য দূতাবাসের মত অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে আসতে হয় না। সেবার দরজা খোলা। জরুরী যোগাযোগের জন্য এই সময়ে পাসপোর্ট সংক্রান্ত কোনো তথ্য জানার থাকলে সোমবার থেকে শুক্রবার অফিস চলাকালীন সময়ে হাইকমিশনের ০১৪৯৪৪৭০৪৪, ০১০২৮৩৪০৬২, ০১৭৪০৮৬০১৪, ০১৩৯১২৩১০৬, ০১৬৩০৭২৪৩৮, ০১১২৫৭৪৭০৭৭ এই নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। যদিও প্রবাসীদের অভিযোগ ফোনে পাওয়া যায় না।
এ মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় চলমান রিক্যালিব্রেশন অর্থাৎ বৈধকরণ চলছে। সাধারণত অবৈধ প্রবাসী কর্মীরা এই সুবিধা নিচ্ছে। ইমিগ্রেশন সূত্রে জানাগেছে ১ লাখ ৫০ হাজারের অধিক বিদেশি নাগরিক এই কর্মসূচির আওতায় নাম নিবন্ধক করে ৮০ হাজারের মত বৈধতা পেয়েছে। এর মধ্যে ৬০ হাজারের মত অবৈধ অভিবাসী নিজ দেশে ফিরে গেছে এবং বাকি অংশ প্রক্রিয়াধীন আছে।
ইমিগ্রেশনের ফেসবুক পেজে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কঠোর লক ডাউনের কারনে ১ জুন থেকে ১৪ জুন রিক্যালিব্রেশন এর কাজ বন্ধ থাকবে সেখানেও করোনার কারণ। তবে প্রবাসীদের প্রত্যাশা ৩০ জুন নয় রিক্যালিব্রেশন কর্মসূচির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে।
ইতোমধ্যে বৈধকরণ কর্মসূচির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য মালয়েশিয়া সরকারের নিকট হাইকমিশন অনুরোধ করেছে বলে হাইকমিশনের একটি সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত বছরের নভেম্বরে রিক্যালিব্রেশন কর্মসূচী ঘোষণার পরপরই দুই সপ্তাহের মধ্যেই হাইকমিশনে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ১ লাখ ১০ হাজার পাসপোর্ট আবেদন জমা পড়ে। কিন্ত সীমিত জনবল ও যন্ত্রপাতি দিয়ে অতি দ্রুত প্রসেস করে কুয়ালালামপুর থেকে এমআরপি সার্ভিসের মাধ্যমে অনলাইনে পাসপোর্টের তথ্যাদি ঢাকায় প্রেরণ করলেও ঢাকা থেকে সময় মত প্রিন্ট হয়ে পাসপোর্ট মালয়েশিয়ায় না আসার কারণে প্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। রেমিটেন্স যোদ্ধারা আশায় রয়েছেন আগের মত দ্রুত পাসপোর্ট হতে পেয়ে বৈধতার সুযোগ নিবে এবং অন্যরা ভিসা নবায়ন করে নিবেন।
এদিকে আগের লেভি সিস্টেমে ভিসা নবায়ন অব্যাহত থাকায় প্রবাসীদের মাঝে স্বস্তি এসেছে। তবে করোনার কারণে ভিসা নবায়নের ধীর গতি লক্ষনীয়। এ বিষয়ে হাইকমিশন কাজ করছে বলে জানা গেছে।
করোনা পরিস্থিতি অবনতির প্রেক্ষিতে হাইকমিশনে এসে জেমকন পাসপোর্ট আবেদন না করে ডাক যোগে পাঠিয়ে দিচ্ছেন আবেদনকারিরা। তেমনি ডাক যোগে পাসপোর্ট প্রদান শুরু করেছে হাইকমিশন। তবে সীমিত আকারে শুরু করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সমগ্র মালয়েশিয়া জুড়ে চালু করা হবে বলে পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার কাউন্সেলর মো: মশিউর রহমান তালুকদার জানিয়েছেন।
তিনি জানান করোনা ভাইরাসের শুরু থেকেই এই প্রক্রিয়া এবং অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদনের তথ্যাদি জানার উন্মুক্ত ব্যাবস্থা করা হয়েছে। যে কেউ মোবাইল ফোন দিয়ে ঘরে বসেই জেনে নিতে পারছে আবেদনের কি অবস্থা এবং ডাক যোগে পাসপোর্ট পাবার পদ্ধতি অনুসরন করতে পারছে। তিনি জানান, কঠোর বিধি নিষেধের মধ্যেই হাইকমিশন গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত ১ লাখ ১৫ হাজার পাসপোর্ট বিতরণ করেছে। সম্প্রতি নতুন চালু হওয়া (পাইলট প্রজেক্ট) পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে এপ্রিল থেকে ৮জুন (সোমবার) পর্যন্ত ১০ হাজার পাসপোর্ট ডেলিভারি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে পাসপোর্ট শাখার ৫০% স্টাফ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং আক্রন্তরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতেও প্রবাসীদের প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়নি। তবে স্বাস্থ্য ঝুকির কারনে উদ্ভট পরিস্থিতিতে পোস্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য দূতাবাস থেকে বুধবার ৯ জুন একটি জরুরি নোটিশ জারি করা হয়েছে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোঃ গোলাম সারোয়ার পোস্ট অফিস সার্ভিস উদ্ভোধনের সময় বলেছিলেন প্রাথমিকভাবে এই সেবা দেশটির ৬ প্রদেশে চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব প্রদেশে চালু করা হবে। পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়া আরোও দ্রুত করা হবে অথবা করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদ্যমান পাসপোর্ট এর মেয়াদ অন্তত দুই বছর বৃদ্ধি করে ভিসা প্রাপ্তির পথ সুগম করবে সরকার এবং দেশে থাকা প্রবাসীদের পরিবারের দু:শ্চিন্তাও মুক্ত করবে বলে প্রবাসীরা আশা করেন।