মালয়েশিয়ায় বৈধকরণ প্রক্রিয়া ও নতুন শ্রমবাজার শিরোনামে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়া’র ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়েছে। ২৫ নভেম্বর ক্লাবের ফেইসবুক পেজে ক্লাবের যুগ্ন-সাধারন সম্পাদক জহিরুল ইসলাম হিরনের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল আলোচনায় মালয়েশিয়ায় বৈধতা প্রক্রিয়া ও কত টাকা খরচ হবে এবং ছুটিতে থাকা প্রবাসীরা কবে ফিরতে পারবেন কি না, এসব বিষয় অলোচনায় উঠে আসে। প্রেসক্লাবের ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রধান শরিফুল হাসান, ডেইলি ষ্টারের কু’টনৈতিক সাংবাদিক পরিমল পালমা, বাংলাভিশনের অভিবাসন সাংবাদিক মিরাজ হোসেন গাজী ও বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়া’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আহমাদুল কবির।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ‘বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর মো: জহিরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ অভিবাসী বৈধতা প্রদানে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনে এখনো কোন নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি হয়নি। সার্ভিস সেক্টরে একমাত্র মালয়েশিয়া নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। শ্রম কাউন্সিলার জহিরুল ইসলাম বলেছেন, বৈধকরন প্রক্রিয়ার পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিস্তারিত গাইডলাইন বা নির্দেশিকা প্রকাশ করা হবে। সে জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এই গাইডলাইন প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় অনিয়মিত বাংলাদেশি প্রবাসীদের কোন ধরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা আর্থিক লেনদেন না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
কর্মীদের বৈধ করার এই প্রক্রিয়াটি পুরোটাই নিয়োগদাতা বা মালিক নির্ভর। সুতরাং এখানে কোন এজেন্ট, দালাল বা তৃতীয় পক্ষের কিছু করার সুযোগ নেই। ফলে কারো প্রলোভনে প্রতারিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা মালিক পরিবর্তন করার সুযোগ করে দিয়েছি এবং সফল হয়েছি। এই করোনা ভাইরাস সংক্রমনের মাঝে আমরা (দূতাবাস) কয়েক হাজার কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করেছি। বেতন বিহীন কর্মী যেন ছাটাই না করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে করোনার মাঝে দেশে ফেরত গেলেও মালয়েশিয়া থেকে একজন ও কাজ হারিয়ে দেশে যেতে হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।
বৈধতার জন্য কোন শ্রমিককে টাকা দিতে হবেনা। মালিক পক্ষ টাকা পরিশোধ করবে। কোন শ্রমিকদের ইমিগ্রেশন যেতে হবে না। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সোর্স কান্টি হিসাবে যুক্ত হয়েছে। ২০১৮/১৯ সালে দূতাবাস ২/৩ লক্ষ পাসপোর্ট বিতরণ করেছে এবং এই করোনার মাঝে ও দূতাবাস প্রায় ৭০ হাজার পাসপোর্ট বিতরণ করেছে। পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে ইতোমধ্যে দূতাবাস ৬ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। এবং আরো নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মালয়েশিয়া পোষ্ট অফিসের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছে যাতে করে পাসপোর্ট মালয়েশিয়া দূরদূরান্তে কর্মরত কর্মীদের পাসপোর্ট পৌঁছে দিতে পারি। কাউকে দূতাবাসে আসার প্রয়োজন হবেনা।
ছুটিতে গিয়ে দেশে আটকে পড়া প্রবাসীরা ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও মেয়াদ বাড়াতে পারবে এবং সরাসরি মালিক ইমিগ্রেশন ডিজির বরাবর আবেদন করে প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হবে। আটকে পড়া প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় বাধা হল করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি। ২য় ধাপে মালয়েশিয়া করোনা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। আশা করছি আগামী ৩১ শে ডিসেম্বরের পর এটি থাকবেনা। তখন মালয়েশিয়া প্রবেশের কোন সমস্যা হবেনা।
বৈধকরন ও নতুন শ্রমবাজার, বাংলাদেশের শ্রমিকদের কী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে?
আলোচনায় অংশ নেয়া ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রধান শরিফুল হাসান, ডেইলি ষ্টারের কূটনৈতিক সাংবাদিক পরিমল পালমা, বাংলাভিশনের অভিবাসন সাংবাদিক মিরাজ হোসেন গাজী ও বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়ার সিনিয়র সহ সভাপতি আহমাদুল কবির, তারা বলছেন, মালয়েশিয়ায় মূলত অদক্ষ খাতের কর্মী বেশি যান ফলে শ্রমিকদের একটু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে মনে হয়।
তাছাড়া সমস্যা হলো মালয়েশিযায় আমাদের কর্মীদের অনেক বেশি টাকা দিয়ে যেতে হয়। যে মেয়াদে তারা যান, সেই সময়ের মধ্যে তারা সেটা তুলতে পারেন না। ফলে তারা অবৈধ হয়ে যান।
তারা বেতন খুবই কম পান, তাদের কষ্টকর কাজ করতে হয়, সবসময় পুলিশের অভিযানের মধ্যে আতঙ্কে থাকতে হয়। ”বড় সংখ্যক মানুষ অবৈধ থাকায় তাদের বৈধ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটা গ্রুপ ব্যবসা করতে শুরু করে। এবার যদিও মালয়েশিয়া সরকার বলছে, কোন তৃতীয় পক্ষ এখানে কিছু করতে পারবে না। কিন্তু দিন শেষে দেখা যায়, সবসময় এই কর্মীরা প্রতারণার শিকার হয়।”
এর আগে ২০১৫ সালে রি-হায়ারিং নামের অনেকটা একই ধরণের একটা কর্মসূচি শুরু করেছিল মালয়েশিয়ার সরকার। সেইবার প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশি নিয়মিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তারপরেও কয়েক লাখ বাংলাদেশি অনিয়মিত থেকে যান।
এবারও বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় অন্য আরও ১৪টি দেশের কর্মীদের সঙ্গে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রতিযোগিতায় নামতে হবে।
আলোচকরা বলছেন, ”অতীতে সবসময়েই একটা দালাল চক্র তাদের প্রতারণা করে টাকাপয়সা নিয়ে গেছে। এবার যদিও মালয়েশিয়া সরকার বলছে, কোন থার্ড পার্টি এখানে থাকবে না। সেটাই যাতে নিশ্চিত হয়, সেটা সেখানকার হাইকমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে।”অন্য যারা অনিয়মিত হয়ে গেছেন, তাদের ব্যাপারে কী হবে, সেটাও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
বিশেষ করে প্রতিটি শ্রমিকের কাছে অভিবাসন সংক্রান্ত সকল তথ্য পৌঁছে দেয়া, যাতে তারা প্রতারণার শিকার না হয়।