আহমাদুল কবির, বিশেষ প্রতিনিধি:
মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরতে বিমানবন্দরে অবৈধ বাংলাদেশিদের সহায়তা করছে হাইকমিশন। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (কেএলআইএ) দেশে ফেরার অপেক্ষমান শত শত বাংলাদেশি যাদের অনেকেই অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিজ দেশে ফেরার প্রয়োজনীয় অনুমোদন এখন পাননি। আর এজন্য অনেকে ফ্লাইট মিস করছেন। এ সমস্যা সমাধানে সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে হাইকমিশনের একটি সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে অনেকে বিমানবন্দরে আটকে আছেন, তারা ইমিগ্রেশন বিভাগের রিটার্ন কর্মসূচির অধীনে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ১৩ মাস আগে শুরু হওয়া এ কর্মসূচির অধীনে নথিবিহীন অভিবাসীদের বেশ কয়েকটি মানদন্ডের মাধ্যমে দেশে ফেরার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। কর্মসূচি শেষ হওয়ার পূর্বমুহূর্তে প্রচুর সংখ্যক অভিবাসী দেশটির বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ।
অভিবাসীদের অনেকেরই অভিযোগ, এই মুহূর্তে মালয়েশিয়ার অভিবাসন চাপ সামলাতে অক্ষম। বিমানবন্দরে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ২০টি কাউন্টার স্থাপন করা হলেও কাজ করছে মাত্র ১০টি।
মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশিসহ বিদেশি শ্রমিকদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সময়সীমা বাড়িয়েছে দেশটির সরকার। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুযোগ বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার জানান, লকডাউন আর বিভিন্ন জটিলতার কারণে অনেকেই এ রিক্যালিব্রেশন রিটার্নের আওতাভুক্ত হতে পারেননি। আমরা এ দেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সময়সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করি।
দেশটির সংশ্লিষ্টরা আমাদের সুপারিশ আমলে নিয়ে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ‘রিক্যালিব্রেশন রিটার্ন’ কর্মসূচির সময়সীমা বাড়িয়েছে মালয়েশিয় সরকার।
চলমান রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে তারা ইমিগ্রেশনের অনুমতি ছাড়াই নিজ দেশে ফিরতে পারবেন। আর নিতে হবে না ইমিগ্রেশনের অ্যাপয়েন্টমেন্ট। অর্থাৎ অবৈধ অভিবাসীরা সরাসরি কুয়ালালামপুর ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে গিয়ে ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা প্রদান করে নিজ দেশে চলে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে পাসপোর্ট বা ট্রাভেল পাস এবং ফ্লাইট টিকিট সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। অবশ্যই করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ফ্লাইটের ৪৮ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে যেতে হবে। আর বিমান বন্দরে দেশে ফেরার ইমিগ্রেশনের জরিমানা দিয়ে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ফ্লাইট ছাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাজির হতে হবে। এ ক্ষেত্রে যথাসময়ে দেশে ফিরতে হাইকমিশনের সংশ্লিষ্টরা বিমানবন্দরে সহায়তা করছেন । তবে যার ফ্লাইট আগে আছে সে যেন সুযোগ পায় সে জন্য প্রবাসীর প্রত্যেকের পরস্পরের প্রতি সহযোগিতা করা দরকার আছে। অপর দিকে সংশ্লিষ্ট এয়ার লাইন্স যাতে যাত্রীকে রেখে না যায় সে জন্য প্যাসেঞ্জার এর তালিকা আগেই ইমিগ্রেশনে দিয়ে দিলে ইমিগ্রেশন উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে পারে। এজন্য ফ্লাইট এজেন্সির দায়িত্ব রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। ফ্লাইট এজেন্সিগুলো সহযোগিতা করবে এমন আশ্বাস পাওয়া গেছে ইউ এস বাংলা, মালয়েশিয়ান এয়ার, মালিন্দ থেকে। তবে একমাত্র ইউএস বাংলা তার যাত্রি না নিয়ে ফ্লাইট ছেড়ে যাচ্ছেনা। যাত্রি নিয়েই গন্তব্যে যাচ্ছ বলে জানা গেছে।
এদিকে অভিবাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে রিক্যালিব্রেশন রিটার্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হয়। সেই থেকে এ পর্যন্ত (২১ ডিসেম্বর) মোট এক লাখ ৯২ হাজার ২৮১ জন অবৈধ অভিবাসী এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য নিবন্ধিত হয়েছেন।
নিবন্ধিতদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার ৯৯ হাজা ৪৭, বাংলাদেশের ২৬ হাজার ৮২১ ও ভারতের ২৩ হাজার ৮৪৪ জন রয়েছেন। এরইমধ্যে মোট নিবন্ধিতদের মধ্যে এক লাখ ৬২ হাজার ৮২৭ জন অবৈধ অভিবাসী নিজ দেশে ফিরে গেছেন।