ডেস্ক নিউজ:
সংবিধানে জনগণকে রাষ্ট্রের মালিকানা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, এমপি। ২৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেল ৩.০০টায় তথ্য কমিশনের উদ্যোগে ঢাকার আগারগাঁওয়ে প্রত্নতত্ত্ব ভবনের মিলনায়তনে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন।
আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদের সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মোঃ মকবুল হোসেন পিএএ।
সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে রচিত সংবিধানের ৩৯ ধারায় মানুষের তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। সেই আলোকেই পরে তথ্য অধিকার আইন করা হয় এবং তথ্য কমিশন গঠন করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশ রচনা করে গেছেন তা নয়, তিনি আমাদেরকে এমন একটি সংবিধান দিয়ে গেছেন যে সংবিধানে জনগণকে রাষ্ট্রের মালিকানা দেয়া হয়েছে।’
সভাপতির বক্তৃতায় প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ বলেন, তথ্য জানার অধিকার এখন মানুষের মৌলিক অধিকারের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের সেই অধিকার নিশ্চিত করেছেন, একারণে তার নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
প্রধান তথ্য কমিশনার আরো বলেন, জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতে আমাদের সবাইকে মিলে সর্বত্র ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরি করে তুলতে হবে। অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে আন্তরিকভাবে সদা সচেতন থাকার অঙ্গীকারে আজ দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে হবে। সর্বদা মনে রাখতে হবে, বর্তমান যুগে তথ্যই শক্তি, তথ্যে জনগণের প্রবেশাধিকার তার অন্য সকল মৌলিক মানবাধিকার পূরণে পরশ পাথর। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দুর্নীতি রোধ তথা সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম হাতিয়ার। আর এ সকলের পথ প্রদর্শক আমাদের ‘তথ্য অধিকার আইন’।
তথ্য কমিশনার সুরাইয়া বেগম এনডিসি বলেন, তথ্য কমিশন এবং তথ্য অধিকার বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকেই পেছনে পড়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে তথ্যসমৃদ্ধ লক্ষ্য অর্জনে অঙ্গীকার করতে হবে। তাহলেই তথ্য অধিকার আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য; স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গড়ে উঠবে, সুফল পাবে দেশের বঞ্চিত নাগরিকগণ। প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে তথ্য অধিকার আদায়ে নেতৃত্বদানকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিশ্বের সকল সমাজ সংস্কারকদের প্রতি এবং টেকসই উন্নয়ন পথের সবচেয়ে পেছনে পড়ে থাকা সমাজের অবহেলিত, দুঃস্থ, বিধবা, প্রতিবন্ধী বা অন্য কোন ভাবে সুবিধা বঞ্চিত হয়েও তথ্য ধারণ করা নারী সদস্যটিকে।
তথ্য কমিশনার ডক্টর আবদুল মালেক বলেন, তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার প্রণয়ন করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে সোপান তার সাথে তথ্য অধিকার একটি আলাদা মাত্রা সংযোজনের মাধ্যমে তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মোঃ মকবুল হোসেন পিএএ বলেন, তথ্য জানার অধিকার সভ্যতার পথে মানুষের এগিয়ে যাবার অন্যতম প্রধান শক্তি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষের এই অধিকার প্রতিষ্ঠা জাতীয় জীবনে এক যুগান্তকারী অধ্যায়। বিভিন্ন পর্যায়ে তথ্য কমিশনের ব্যাপক প্রশিক্ষণ, জনঅবহিতকরণ এবং প্রচারের ফলে তথ্য প্রদানে কর্তৃপক্ষের মাইন্ডসেট পরিবর্তিত হয়েছে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য কমিশনের সচিব সুদত্ত চাকমা। পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ এবং এনজিওসমূহের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান মুকুর। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থাপ্রধান ও প্রতিনিধিবৃন্দ, একাডেমিসিয়ান, তথ্য অধিকার বিষয়ক পুরস্কারপ্রাপ্তগণ, এবং সাংবাদিকসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছর আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি উদ্যাপন করা হয়। বর্তমানে মহামারী করোনা (কোভিড-১৯) পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তথ্য কমিশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করেছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- “তথ্য আমার অধিকার, জানা আছে কি সবার” এবং স্লোগান: “তথ্য আমার অধিকার, জানতে হবে সবার।”
আলোচনা শেষে ২০২০ সালে তথ্য অধিকার আইন চর্চায় গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখার জন্য এবছর ছয়টি ক্যাটাগরিতে ১৩টি পুরস্কার দেয়া হয়। পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এবং ১ম পুরস্কার ২০ হাজার টাকা ও ২য় পুরস্কার ১৫ হাজার টাকা দেয়া হয়। মন্ত্রণালয় পর্যায়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান পিএএ প্রথম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহফুজা আকতার দ্বিতীয় সন্মাননা অর্জন করেন। বিভাগীয় পর্যায়ে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মোঃ খলিলুর রহমান প্রথম এবং খুলনা বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ম নিবন্ধক জনাব মোঃ মিজানুর রহমান দ্বিতীয় সন্মাননা অর্জন করেন।