ডা. সুব্রত ঘোষ | কলামিস্ট, সংগঠক, সমাজকর্মী এবং চিকিৎসক
৩০ লক্ষ শহীদ আর ৩ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই স্বাধীনতা। ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই আন্দোলনের পক্ষে সাতক্ষীরার মানুষকে জাগ্রত করে জাতীয় চেতনার সাথে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে এখানে আন্দোলনের মূল স্রোতটি নির্মিত হয়েছিল। ১৯৬৮ সলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় সাতক্ষীরার অনেকেই অভিযুক্ত হন। ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে সাতক্ষীরায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠে।
২৫ মার্চ ১৯৬৯ জেনারেল ইয়াহিয়া দ্বিতীয় বারের মত মার্শাল ল’ জারি করেন। জাতীয় পরিষদ বাতিল করে নিজে স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হয়ে দেশের অন্যান্য স্থানের মত সাতক্ষীরায়ও বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়।
১৯৭০ সালের নির্বাচন বাঙালী জাতির জন্য এক গৌরবময় অধ্যায়। স্বাধিকার আর স্বাধীনতার চেতনায় বাঙালি জাতি আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ১৬২ আসনের মধ্যে ১৬০ টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ টিতে বিজয়ী করে। প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে সাতক্ষীরায় ৫টি আসন থেকেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়লাভ করে।
১ মার্চ জাতীয় সংসদের অধিবেশন বন্ধ ঘোষনার পর পরই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য স্থানের মত সাতক্ষীরার বীর বাঙালীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ২ মার্চ এখানে স্বতঃস্ফুর্তভাবে হরতাল পালিত হয়। সারাদেশের মত সাতক্ষীরাতেও বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। রাজপথে বের করা হয় খ- খ- মিছিল। ৩ মার্চ জারিকৃত কারফিউ অমান্য করে পাকসেনাদের দোসরদের হাতে সারাদেশের মত সাতক্ষীরার রাজপথ রক্তে রাঙা হয়ে ওঠে। সাতক্ষীরা কলেজ প্রাঙ্গন থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। মিছিলটি কোর্ট এলাকায় এলে লোক সংখ্যা আরও বৃদ্ধ পায়। শ্লোগান ছিল জয় বাংলা আর নয় অধীনতা, এবার চাই স্বাধীনতা, বীর বাঙালী অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ ন্বাধীন কর ইত্যাদি। মিছিলটি এক পর্যায়ে জঙ্গীরূপ নেয় এবং পাকাপুল (বেইলী ব্রিজ) পার হয়ে চাপড়া লজের নিকট এলে চাপড়া লজ থেকে ঐ মিছিলের উপর মুসলিম লীগ নেতারা গুলিবর্ষন করে। হটাৎ মিছিল থমকে দাঁড়ায়। সাথে সাথে গুলিতে শহীদ হন রিক্সা চালক আব্দুর রাজ্জাক। আহত হন অনেকেই। এরপর উত্তেজিত জনতা পেট্রল পাম্প থেকে পেট্রল নিয়ে চাপড়া লজে আগুন লাগিয়ে দেয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে সাতক্ষীরার প্রথম শহীদ আব্দুর রাজ্জাককে প্রাণসায়ের দীঘির পূর্ব পার্শ্বে কবর দেয়া হয়। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেন। “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” এই ভাষনের কথা শুনে সারা দেশের মত সাতক্ষীরার আপামর মুক্তিপাগল জনতা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। কেন্দ্রের নির্দেশ মোতাবেক ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে বাংলাদেশ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতিটি জেলা, মহকুমা ও থানা সদরে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৮ মার্চ স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা তৎকালীন এস.ডি.ও অফিস থেকে নামিয়ে নেয় জিন্নাহর ছবি। একই দিনে কালিগঞ্জ সোহরাওয়ার্দি পার্কে পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। নকিপুর ছাত্রলীগ কার্যালয়ে, নকিপুর হাইস্কুল ও শ্যামনগর থানাতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। দেবহাটা থানা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে থানা চত্ত্বরে বিশাল এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পক্ষে শপথনামা পাঠ করান হয় এবং স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়। ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের বিরোধিতা করে সাতক্ষীরাতে পাকাপুলের মোড়ে তোলা হয় সবুজের মাঝে লাল রঙের সূর্যের ভেতর বাংলাদেশর মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা। পুলিশ বাহিনী ও ছাত্রবৃন্দ আনুষ্ঠানিকভাবে এই পতাকার প্রতি অভিবাদন জানায়। পাকিস্তানী পতাকা পোড়ান হয়। ছাত্রনেতাদের জ্বালাময়ী ভাষনে সাড়া দিয়ে সংগ্রামী সাতক্ষীরাবাসী জানান দেয় তারা দেশ রক্ষার যুদ্ধে প্রস্তুত। ২৫ মার্চ নেমে আসে কালো রাত। সারাদেশ জুড়ে চলে পাকিস্তানী হানাদারদের নারকীয় তা-বলীলা। ঐ রাতেই পাক বাহিনীর বর্বরতার খরব ওয়ারলেসে সাতক্ষীরাতে পেঁছে যায়। তৎকালীন সাতক্ষীরা জেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে উক্ত তথ্য প্রদান করেন। অতঃপর আওয়ামী লীগ নেতারা সাতক্ষীরা শহরে মাইকযোগে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। ঐ রাতেই ছাত্র নেতারা ইপিআর ক্যাম্পগুলো ঘুরে ঘুরে তাদের সমর্থন আদায় এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহনের আহবান পৌঁছে দেন। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সাতক্ষীরাতেও স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। সংগ্রাম পরিষদ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী এবং স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ে সাতক্ষীরার সর্বত্র ব্যপক কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। সাতক্ষীরার প্রতিটি থানায়ও স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ২৬ মার্চ সাতক্ষীরায় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবর্গ, আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিকামী বীর জনতা বর্বর পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার লক্ষ্যে সাতক্ষীরাগামী দুটো প্রধান রাস্তার কদমতলা ও বিনেরপোতায় রাস্তা কেটে ও গাছ ফেলে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। থানাঘাটা ও লাবসার দুটি কাঠের পুল খুলে ফেলা হয়। তাছাড়া শাকদহ ও পাটকেলঘাটা ব্রিজের কাছে পীচের রাস্তা কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এসব দুঃসাহসিক কাজে স্থানীয় সর্বস্তরের জনগণ শাবল, কোদাল, কুড়াল, ঝুড়ি দিয়ে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা ও কর্মীদের সহযোগিতা করেন। ভোর রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষনা দেন এবং গ্রেফতার হন পাকিস্তানীদের হাতে। এদিকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয় কর্মকান্ডকে আরও গতিশীল ও পরিচালনা করার জন্য বর্ধিত আকারে সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। ২৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ডাকের ঘোষনাপত্র পাঠ করেন মেজর জিয়া। ঐ দিনই বঙ্গবন্ধুর পক্ষে হান্নান শাহ আরও একটি স্বাধীনতার ঘোষনা প্রচার করেন। সাতক্ষীরার পি এন হাই স্কুল মাঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ জনতা ও প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত আনসার ও মুজাহিদ বাহিনী সমবেত হয়। ২৮ মার্চ তালা ডাক বাংলো চত্ত্বরে ছাত্রনেতারা পাকিস্তানী পতাকা নামিয়ে তা পুড়িয়ে দেয় এবং স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে।
২৮ মার্চ ছাত্র লীগ, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে সাতক্ষীরায় সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সকলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এদিন বিকালে ভারতের কালুতলা বাজারের কালী মন্দির প্রাঙ্গনে এক জনসভায় সাতক্ষীরার মুক্তিকামী জনতার পক্ষ থেকে মুক্তি সংগ্রামে ভারতীয় জনগনের সাহায্য ও সহযোগীতার আহবান জানান। ৫ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধারা দেবহাটায় বি ও পি ক্যাম্পে অতর্কিতে আক্রমন করে ৬ টি চাইনিজ রাইফেল, কিছু থ্রি নট থ্রি রাইফেল ও প্রচুর পরিমানে গুলি হস্তগত করে। ৮ এপ্রিল ৩ প্লাটুন ই পি আর পাক বাহিনীর আক্রমন প্রতিরোধকল্পে পাটকেলঘাটা, কদমতলা ও আশাশুনিতে অবস্থান নেয়। সাতক্ষীরা সদর থানার সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরের আম্রকাননে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ সতক্ষীরা ট্রেজারী থেকে সাড়ে তিন শত থ্রি নট থ্রি রাইফেল এবং প্রচুর পরিমাণে গুলি লুট করে এবং পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মহকুমা প্রশাসককে আটক করে। ১৯ এপ্রিল ৩০/৩৫ জন ই পি আর এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা তিন খানা গাড়ি নিয়ে রাত ৮ টার দিকে সাতক্ষীরার ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে নগদ ১ কোটি ৮৭ লক্ষ টাকা, এন মণ সোনা, আধা মণ রূপা ভোমরা বরাবর ভারতের বশিরহাট মহকুমার ট্রেজারিতে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের নামে জমা দেয়। ২১ এপ্রিল পাকবাহিনীর বাঙালী এজেন্ট তথা রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের প্ররোচনায় সাতক্ষীরার বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা মিলিটারীদের হাতে ধরা পড়েন এবং পাক সেনারা রেজিস্ট্রী অফিসের মাঠে ফেলে তাঁদের ব্যানেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করার পর তাঁদের বাড়ি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেয়। এরই মধ্য দিয়ে সংগঠিত হতে থাকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
এক একজন মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়িয়ে দিত শতগুণে। মৃত সহযোদ্ধার রক্ত ছুঁয়ে তাঁরা শপথ নিত মাতৃভূমিকে হানাাদার বাহিনী মুক্ত করার। এক একটি মুক্তিযোদ্ধার লাশের বদলে শত সহস্র খান সেনাদের লাশ চাই। মূলতঃ এপ্রিল মাস থেকেই সাতক্ষীরার বিভিন্ন অঞ্চলে পাক সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সরাসরি যুদ্ধ শুরু হয়। দীর্ঘ সাতমাস ধরে ভোমরা, টাউন শ্রীপুর, গোপালপুর, বয়ারগাতি, পিরোজপুর সহ একাধিক স্থানে যুদ্ধ চলে। এসব যুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে শহীদ হন অনেক বাংলা মায়ের মুক্তি পাগল বীর সন্তান। অনেক মা-বোনেরা হারান তাঁদের সম্ভ্রম। ১৯ নভেম্বর বাংলার দামাল ছেলেদের হাতে মুক্ত হয় শ্যামনগর। ২০ নভেম্বর কালিগঞ্জ হানাদার মুক্ত হয়। ৩০ নভেম্বর যুদ্ধের শেষ প্রান্তে দুঃসাহসিক এক অভিযানে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌছায়। পাকসেনাদের অত্যন্ত কড়া বেষ্টনী ভেদ করে মুক্তিপাগল বীর মুক্তিসেনারা ডিনামাইট চার্জ করে ‘পাওয়ার হাউস’ উড়িয়ে দেয়। সাতক্ষীরা শহরকে তারা পরিনত করে ভুতুড়ে শহরে। শহরের প্রানকেন্দ্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সফল অভিযানে পাক সেনারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। ৪ ডিসেম্বর শ্যামনগর আর কালিগঞ্জ থেকে পিছু হটে পারুলিয়াতে ঘাটি করা পাক বাহিনীর উপর রাতে অতর্কিতে হামলা চালায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। হানাদার বাহিনীরা কুলিয়া ব্রীজের কাছে নতুন অবস্থান নেয়। ৫ ডিসেম্বর ভোর বেলা আক্রমন চালিয়ে মুক্তিসেনারা ৪ জন পাক সেনাকে হত্যা করে। প্রচন্ড যুদ্ধে শহীদ হন ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা, আহত হন অনেকেই। সন্ধ্যায় মুক্তিযোদ্ধারা নতুন করে সংগঠিত হয়ে আক্রমন করলে পাক সেনারা কুলিয়া ব্রীজ ছেড়ে বাঁকাল ব্রীজের কাছে অবস্থান নেয়। পথিমধ্যে কুলিয়া ব্রিজ এবং আলীপুর লোহার সেতু ধ্বংস করে আসে। ৬ ডিসেম্বর বেলা ১১ টার সময় অল ইন্ডিয়া রেডিও মারফত খবর আসে ভারত বাংলাদেশবে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বিকৃতি দিয়েছে। বিশ্ব জনমত সুদৃঢ় হয় বাংলাদেশের পক্ষে। পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়। দেবহাটা ও কলারোয়া হানাদার মুক্ত হয়। রাতের আঁধারে পাক হানাদাররা পালিয়ে যায় সাতক্ষীরা থেকে। যাওয়ার সময় সাতক্ষীরা শহরে প্রবেশের প্রধান তিনটি ব্রীজ; বাঁকাল, কদমতলা ও বিনেরপোতা ব্রীজ উড়িয়ে দিয়ে নত শিরে পলায়ন করে। বিদ্যুৎ গতিতে এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।
৭ ডিসেম্বর চতুর্দিক থেকে ফাঁকা গুলির আওয়াজ করতে করতে শহরে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধারা। পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার আনন্দে স্বজন হারানোর ব্যাথা ভুলে গিয়েছিল তাঁরা। মুক্তির নেশায় উন্মত্ত দামাল ছেলেরা এদিন সাতক্ষীরার মাটিতে প্রথম স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উড়ায়। বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত জয়ের নিশান উত্তোলনের সাথে সাথে ফাঁকা গুলির আওয়াজ আর আনন্দ- উল্লাসে মুখরিত হয় কোর্ট প্রাঙ্গন (বর্তমানে পুরাতন জজ কোর্ট)। জয় বাংলা; জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে তারা মুখরিত করে তোলে গোটা সাতক্ষীরা।
১৪ ডিসেম্বর পরাজয় নিশ্চিত জেনে জাতিকে বুদ্ধিজীবী শূন্য করার নিমিত্তে এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় পাক হানাদাররা মেতে ওঠে এক নির্মম হত্য যজ্ঞে। সাতক্ষীরাতেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয় অনেক বুদ্ধিজীবীকে।
১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। জন্ম হয় একটি স্বাধীন দেশ- “বাংলাদেশ” ৯৩ হাজার সেনা সহ আত্মসমর্পন করে পাক হানাদাররা। ৩০ লক্ষ নিষ্পাপ বাঙালীর প্রাণ আর ৩ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হল। সারাদেশে সহ সাতক্ষীরাতে শহীদ হন নাম না জানা অনেক মুক্তিসেনা। স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি মুহর্তেই পাকবাহিনী এবং তাদের এদেশীয় কিছু দোসরদের সহায়তায় সারাদেশের মত সাতক্ষীরাতেও নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। নিরীহ নিরস্ত্র জনগণের উপর নির্মমতার মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ ২০ এপ্রিল ঝাউডাঙ্গা বাজারে শরণার্থী কাফেলার উপর গুলি বর্ষন, ২১ এপ্রিল সাতক্ষীরা টাউন হাইস্কুলের (বর্তমানে সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়) পাশে দীনেশ কর্মকারের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া শরনার্থীদের হত্যাকান্ড, ২৩ এপ্রিল পাটকেলঘাটা বাজারে আশ্রিত শরণার্থীদের হত্যাকান্ড, ২৮ এপ্রিল কলারোয়া বাজারে হত্যাকান্ড, মে মাসের মধ্যভাগে দেবহাটা থানার হাদিপুরের হত্যাকান্ড, মে মাসের প্রথমদিকে তালা থানার হরিণখোলা ও গোয়ালপোতা গ্রামের হত্যাকান্ড, ১৬ মে কালিগঞ্জের রতনপুর বাজারের হত্যাকান্ড, ১৮ মে দেবহাটার পারুলিয়া গ্রামের শরণার্থীদের হত্যাকান্ড, ২০ মে সাতক্ষীরা সদর থানার ঘোনা গ্রামেন হত্যাকান্ড, ৭ জুন জালালপুর ও শ্রীমস্তকাটি গ্রামের হত্যাকান্ড, ৯ সেপ্টেম্বর শ্যামনগরের হরিনগর বাজারের হত্যাকান্ড, ২৫ সেপ্টেম্বর দেবহাটা থানার চৌবাড়িয়া, বৈচনা এবং শ্রীরামপুর গ্রামের হত্যাকান্ড। সাতক্ষীরার ডায়মন্ড হোটেল এবং পি এন হাই স্কুলে মুক্তিযোদ্ধা এবং নিরীহ মানুষদের নির্যাতনের জন্য পাকবাহিনী এবং তাদেও পা চাটা গোলাম শান্তিবাহিনী, রাজাকার, আলবদররা টর্চার সেল খোলে।
মহান মুক্তিযুদ্ধকে সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য মুজিব নগরে গঠিত অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার সমগ্র বাংলাদেশকে মোট ১১ টি সেক্টরে ভাগ করেন। সাতক্ষীরার অঞ্চল ছিল ৮ নং এবং ৯ নং সেক্টরের অধীনে। মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনী কয়েকটি ভাগে বিভক্ত ছিল। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ই পি আর, পুলিশ, আনসার ও মুজাহিদদের নিয়ে নিয়মিত বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। তাদেরকে বলা হতো এম এফ অর্থাৎ মুক্তি ফৌজ। সাধারণ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে গঠিত বাহিনী সদস্যদের বলা হতো এফ এফ অর্থাৎ ফ্রিডম ফাইটার এবং শিক্ষিত ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন ছাত্র ও যুবকদের নিয়ে গঠিত হয় বি এল এফ অর্থাৎ বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স। এই বি এল এফ এর ই পরবর্তীতে নাম হয় মুজিববাহিনী। আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে নৌ কমান্ডোদের অপারেশন পাক বাহিনীর ভিতকে চূড়ান্তভাবে নাড়িয়ে দেয়। তারা মংলা বন্দর সহ বিভিন্ন স্থানে পাক বাহিনীর অস্ত্র ও গোলা বারুদের জাহাজ ধ্বংশ করেন অত্যন্ত সাহসীকতার সাথে।
মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি মুহূর্তই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তবুও কিছু কিছু যুদ্ধ অর্জনকে আরও রড় করে দিত- দিত নতুন পথ চলার উন্মাদনা। এসব উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের মধ্যে ২৯ এপ্রিল ভোমরা যুদ্ধ, ৯ মে গাবুরায় পাক বাহিনীর সাথে নৈশযুদ্ধ, ৬ জুন টাউন শ্রীপুরের যুদ্ধ, ১২ জুলাই বসন্তপুর যুদ্ধ, বৈকারী পাক ক্যাম্প দখলের যুদ্ধ, ৩ জুলাই খানজিয়া ক্যাম্প আক্রমন, ২৮ জুলাই উকসায় যুদ্ধ, ১৬ আগস্ট কেরাগাতি গানবোটের সাথে যুদ্ধ, ১৫ আগস্ট পারুলিয়া ব্রিজ অপারেশন, হরিনগর গান বোটের সাথে যুদ্ধ, ৩ অক্টোবর রাবাত রাজাকারদের সাথে যুদ্ধ, ১৯ আগস্ট গোপালপুর যুদ্ধ, ২৭ আগস্ট হিজলদি যুদ্ধ, ৩০ সেপ্টেম্বর উকসা যুদ্ধ, ২৪ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর যুদ্ধ, ইলিশপুর রাজাকার ক্যাম্প আক্রমন, ১৭ সেপ্টেম্বর বালিয়াডাঙ্গা যুদ্ধ, ২০ সেপ্টেম্বর সোনাবাড়িয়া যুদ্ধ, ১৭ সেপ্টেম্বর গোয়ালডাঙ্গা যুদ্ধ, কালিগঞ্জ রাজাকার ক্যাম্প দখল, ২৬ সেপ্টেম্বর কালিগঞ্জ ন্যাশনাল ব্যাংক অপারেশন, ২৯ সেপ্টেম্বর দুদলি যুদ্ধ, মাহমুদপুর পাক ক্যাম্প আক্রমন, ১২ অক্টোবর ভেটখালি যুদ্ধ, ১৩ অক্টোবর খোর্দ্দ যুদ্ধ, ১৭ অক্টোবর ভাতশালা যুদ্ধ, চাপড়া যুদ্ধ, ৩ অক্টোবর আশাশুনি রাজাকার ক্যাম্প অপারেশন, নওয়াবেঁকী বাজারে রাজাকারদের সাথে যুদ্ধ, রামজীবনপুর যুদ্ধ, ২৫ নভেম্বর মাগুরা যুদ্ধ, ১৪ নভেম্বর বলিয়াদহ যুদ্ধ, মাধবকাটির যুদ্ধ আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তির আস্বাদন দিত-অনুপ্রেরণা যোগাত।
সারাদেশের ন্যায় সাতক্ষীরার সেবাব্রতী মা ও বোনেরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ডাক্তার, আইনজীাবী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের উল্লেখযোগ্য অবদান বাঙালী জাতির ইতিহাসে স্মরনীয় হয়ে থাকবে চিরকাল। সাতক্ষীরার সন্তানদের মধ্যে অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নাটকের সংলাপ তৈরি করতেন আর পাশাপাশি অভিনয় করতেন। আবার অনেকেই নেপথ্য সংগীতে কন্ঠ দিতেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রবন্ধ পাঠ করতেন সাতক্ষীরারই এক কৃতি সন্তান। আর এক কৃতি সন্তান মুজিবনগর সরকারের সমর সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। রণাঙ্গনে ঘুরে এলাম এবং মুক্তঞ্চল ঘুরে এলাম নামক দুটি কথিকা বেতার থেকে প্রচার করে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জোগাতেন সাতক্ষীরার কৃতি সন্তানরাই। সতিক্ষীরা এক কৃতি সন্তান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভাষ্যকর ছিলেন। তিনি পিন্ডির প্রলাপ ‘রক্তলাল পিন্ডি’ -এর লেখক ও পাঠক ছিলেন। সাতক্ষীরার আর এক সাংবাদিক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে জবাব তার অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন।
সাতক্ষীরার এক কৃতি সন্তানের গান ও কবিতা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হত এবং তাঁর রচিত ‘অভিযোগ ইশতেহার’ প্রচারিত হত প্রতিদিন। ১৯৭১ সালের মে মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙা বিল্ডিংয়ে সর্বস্তরের দেশত্যাগী শিক্ষকদের সমাবেশে গঠিত হয় ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি’। ১২ সদস্যের এই কমিটিতে সাতক্ষীরার কৃতি শিক্ষক নেতারা ছিলেন। সহযোগী সংগঠন হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ফুটবল দল গড়ে ওঠে। সমস্ত ভারত ব্যপী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গড়ে তুলতে ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’ গঠন করা হয়। ৬ জুন ১৯৭১ গঠিত স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ১৬ টি খেলায় অংশ গ্রহন করে। এই দলে সাতক্ষীরা সদর থানার ভাড়–খালি গ্রামের এক কৃতি খেলোয়াড় ছিলেন। আশাশুনি থানার কোদান্ডা হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক যুদ্ধ কালীন সময়ে ভারতে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মুক্তি পত্রকা প্রকাশ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাতক্ষীরার স্বাধীনতাকামী বহু চিকিৎসক বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।
তদানিন্তন পশ্চিম পাকিস্তানীদের অমানুষিক অত্যাচার, নির্যাতন এবং শোষনের বিরুদ্ধে বীর বাঙালীরা ক্ষেপে উঠে ছিনিয়ে নিয়েছিল তাদের স্বাধীনতা, তাদের সার্বভৌমত্ব। সেই থেকে এই ৭ ডিসেম্বর দিনটি বিশেষ মর্যাদার সাথে “সাতক্ষীরা মুক্ত দিবস” হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সাতক্ষীরাবাসী পালন করে থাকে। সময় ছুটে চলার সাথে সাথে পার হয়ে গেছে স্বাধীনতার চুয়াল্লিশটি বছর তথা ৪৪ টি ১৬ ই ডিসেম্বর- ৪৪ টি বিজয় দিবস, পার হয়ে গেছে ৪৪ টি ৭ ই ডিসেস্বর। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে চলা অকৃতজ্ঞ মানুষ ভুলে গেছে শহীদদের আত্মদানের কথা। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো আজ পর্যন্ত সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে শহীদদের গনকবর সংরক্ষণ করা হয়নি। নির্মাণ করা হয়নি কোন স্মৃতিসৌধ। স্বাধীনতার রজত জয়ন্তীতে গণকবরে শায়িত শহীদদের প্রথমবারের মত স্মরণ করা হয়। সরকারি কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা শহীদদের প্রতি পুষ্পাঞ্জলি অর্পনের মধ্য দিয়ে প্রথম বারের মত শ্রদ্ধা নিবেদন করে, তারপর আর কেউ গণকবরে ফুল দেয়নি।
১৯৯৫ সালে আর্কিটেক্টর কাজী আনিসউদ্দীন মাহমুদের তৈরী নকশা মোতাবেক যশোর-সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের সংযোগস্থলে তথা পলাশপোলস্থ খুলনারোডের পাশে আটশতক জমি নির্ধারণপূর্বক স্মৃতিসৌধের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সেখানে যেভাবে দোকানপাট গড়ে উঠেছে তাতে আদৌ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ হবে কি না তা নিয়ে সাতক্ষীরাবাসী উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। তাছাাড়া নতুন জজকোর্টের সামনে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধাদের ফলকে অনেক শহীদের নামই অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। বরং বেশ কিছু অমুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে অমুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের নাম কাল কালি দিয়ে মেিছ দেওয়া হয়েছে যেটা দেখতে বেশ দৃষ্টিকটু। এটা আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অবমাননা। এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বার বার লেখালেখি করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসন, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাতক্ষীরার জেলা থেকে মন্ত্রীপরিষদে থাকা মন্ত্রীও এ ব্যাপারে উদাসিন। সদ্য অতীত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সাতক্ষীরা সফরে আসলে তিনিও বিষয়টি খুব বেশী আমলে নেননি। এক অর্থে প্রশাসনিক জটিলতা ও উদ্যোগ গ্রহণের আন্তরিকতার অভাবের অন্তরালে চলছে মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস উপস্থাপন।
সাতক্ষীরাবাসী অর্থাৎ সমগ্র জাতির এই চরম দুর্যোগপূর্ণদিনে হাল ধরতে হবে আমাদের তথা ভবিষ্যত কর্ণধর কিশোর-তরুন-যুব সমাজকে। কিন্তু আমাদের সামনে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরবে কে? সখন সমগ্র জাতির রক্তের প্রতিটি কণিকায় মিশে আছে কেবল মীর জাফর, রাজাকার আর স্বদেশী কিছু বেঈমানদেন রক্ত। তাই এই “কে” এর উত্তর পাওয়া কার্যত অসম্ভর। তবুও এই অসম্ভবকে সম্ভব করে সন্মুখপানে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের নিজেদেরকেই, নিজেদের অস্তিত্ত্বের স্বার্থে। আসুন আজ সাতক্ষীরা মুক্ত দিবসে প্রতিজ্ঞা করি যেকোন মূল্যে, জীবন দিয়ে হলেও আমারা আমাদের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বকে টিকিয়ে রাখবোই। জয় বাংলা।