পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব: উদ্বিগ্ন মালয়েশিয়া প্রবাসীরা

কালের কলম
6 Min Read
চিত্র: বাংলাদেশী পাসপোর্ট, ছবি: ঢাকা ট্রিবিউন।

আহমাদুল কবির, বিশেষ প্রতিনিধি: 

মালয়েশিয়া থেকে পাসপোর্ট পেতে আবেদনকারীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। করোনার আগে দ্রুত পাসপোর্ট দিতে পারলেও মহামারি করোনার ফলে সৃষ্ট প্রতীক্ষা ক্রমশ: দীর্ঘতর হচ্ছে। এ নিয়ে গ্রেফতার হওয়া, সময় মত ভিসা নবায়ন করতে না পারা এবং জরিমানা দেওয়ায় উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন মালয়েশিয়া প্রবাসীরা।

তবে হাইকমিশন এবং ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে দ্রুত প্রবাসীদের নিকট পাসপোর্ট পৌঁছে দিতে। এ দিকে পাসপোর্টকে কেন্দ্র করে দালালি, প্রতারণা এবং হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘ ও পুরাতন। বিপরীতে পাসপোর্ট সার্ভিসের উন্নতি বিধানে প্রচেষ্টা যেন প্রত্যাশার সামান্যই পূরণীয়। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়ই দেখা যায়, পাসপোর্ট করতে দিয়েছে কিন্তু পাচ্ছে না, দালাল টাকা নিয়ে উধাও, অপরদিকে সরকার দালাল ধরছে ইত্যাদি।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের নাগরিকদের পাসপোর্ট প্রাপ্তি নিয়েও এমন ঝামেলা বা হয়রানির বাইরে নয়। ইতোপূর্বে অনেক কাহিনী ঘটে গেছে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। সর্বশেষ সরকার আলাদা ভবন নিয়ে পাসপোর্ট সেবা দিয়ে আসছিলো কিন্তু করোনার কারণে সেটাও বন্ধ করতে রয়েছে। সেখানে অধিক লোক সমাগমের ফলে যানবাহন ও লোক চলাচলে এবং পরিবেশ নোংরা করা নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে সমাবেশ করতেও দেখা গেছে। সেখান থেকে পুলিশ বেশ কয়েকজন দালালকে গ্রেফতার করে এবং এতে প্রবাসীদের মনে স্বস্তি আসে যে, এখন আর দালালের উৎপাত সহ্য করতে হবে না। একইভাবে করোনা আসার ফলে অফিসে লোক সমাগমের নিষেধ থাকায় ডাক যোগে আবেদন পাসপোর্ট আবেদন নেওয়া শুরু করে এবং পাসপোর্ট ডেলিভারি সরাসরি ছিল কিন্তু অধিক লোক সমাগম আয়ত্তে আনা সম্ভব হয়নি এবং করোনা সংক্রমন বিস্তার লাভ করে বেশ কয়েকজন পাসপোর্ট শাখার স্টাফ আক্রান্ত হয় ফলে মালয়েশিয়া সরকারের নিয়ম অনুযায়ী সরাসরি পাসপোর্ট সেবা বন্ধ করতে হয়েছে। এর পরিবর্তে ডাক যোগে পাসপোর্ট প্রদান শুরু করেছে। ফলে যে যে এলাকায় থাকে সেখানের পোস্ট অফিস থেকে পাসপোর্ট নিতে পারছে। কিন্তু করোনার কারণে চলাচলের বিধি নিষেধ থাকায় ডাক ঘরে গিয়ে পাসপোর্ট নেওয়া ও সম্ভব হচ্ছে না।

অপর দিকে অনলাইন পদ্ধতি সকলে অভ্যস্ত না হওয়ায় বুঝে উঠতে সময় লাগছে এবং অনলাইনে সার্চ করলেও পাসপোর্ট ঢাকা থেকে আসেনি, এখনো পায়নি, কোন বার্তাই দেখাচ্ছে না ইত্যাদি নানা জাতীয় সমস্যা দেখা যাচ্ছে। পাসপোর্ট আবেদন করার পর হাইকমিশন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অনলাইনে কাজ সম্পন্ন করলে ডেলিভারি স্লিপ নং আসে। এর পর এটি দিয়ে ডাকবিভাগের অনলাইন সুবিধা নিয়ে ডাক বিভাগের বারকোড নিতে হয় যা এই বারকোড দিয়েই পাসপোর্ট ডেলিভারি নেওয়া হয়। কিন্তু এখানেও প্রাপ্তিতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে অনেকে। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও নজর দিতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

পাসপোর্ট যে কোন নাগরিকের আন্তর্জাতিক পরিচয় পত্র তাই এটি না পেলে প্রবাসীদের সান্তনা থাকে না, অপরদিকে ভিসা প্রাপ্তির প্রচলিত উপায় ও পদ্ধতিও অনুসরণ করতে পারে। বর্তমানে বৈধদের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা এবং অবৈধদের বৈধ হবার সুবর্ণ সুযোগ নিতে পাসপোর্ট আবশ্যক। এরপর অন্যান্য শর্ত পূরণ হলে বৈধতা পাবে কিন্তু পাসপোর্ট ছাড়া আবেদন করার কোন সুযোগ নেই। তাই আবেদনকারীরও যেমন উদ্বিগ্নতায় রয়েছে। এবং একই টেনশনে আছে দেশে থাকা পরিবারেরও।

হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন কাভার্ড ভ্যান ভর্তি আবেদন হাইকমিশনে আসছে যা প্রক্রিয়া করে পাসপোর্ট পোর্টালে আপলোড করতে ২/৩ সপ্তাহ লেগে যাচ্ছে এরপর পাসপোর্ট ঢাকা থেকে প্রিন্ট করে হাইকমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আবেদনকারীর চাহিদা অনুযায়ী ডাক যোগে বিতরণ করা হয়। ডাক বিভাগের অনলাইন সিস্টেম ফলো করলে হাইকমিশন বুঝতে পারে যে আবেদনকারী কোথায় আছেন এবং সে অনুযায়ী প্রেরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে ডাক বিভাগ সমগ্র মালয়েশিয়ায় ৪০ টির মত শহরে সার্ভিস দিচ্ছে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ডাক বিভাগ ক্রমশ: সমগ্র মালয়েশিয়ায় চালু করবে এজন্য জনবল এবং অবকাঠামো তৈরি করছে। আর অনলাইনে দুইবার প্রক্রিয়া করার পদ্ধতি থেকে বের হয়ে একটি ইউনিক পদ্ধতি চালু করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে প্রবাসীদের দ্রুত পাসপোর্ট দিতে প্রয়োজনীয় সকল পদ্ধতি অনুসরণ ও অবলম্বন করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং হাইকমিশনে অনুরোধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তাফা ফিরোজ বলেন, সময় মত পাসপোর্ট পাবার ক্ষেত্রে সকল পদ্ধতি সহজ করা গেলে করোনা সময়েও ভালো সার্ভিস দিয়ে প্রবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব। পাসপোর্ট কেন্দ্রিক সমস্যার কথা প্রবাসীর পরিবারও বলে থাকে তাই এদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সেন্টারফর এনআরবির চেয়ারম্যান এসএম শেকিল চৌধূরী বলেন, করোনা পরিস্থিতি সব কিছু পাল্টে দিলেও সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। আমি জানি আগে দূতাবাস দ্রুত সার্ভিস দিয়েছে কিন্তু করোনার কারণে পারছে না। সরকারের পাশাপাশি প্রবাসী সংগঠন গুলোকে আরো সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। সবাইকে সম্মিলিতভাবে এই করোনা প্রতিক্রিয়া মোকাবেলা করতে হবে।

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার গোলাম সারোয়ার বলেন, করোনা মহামারীর মধ্যে সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে জীবনের ঝুকি নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রবাসীদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দুতাবাসের অর্ধেকের মত কর্মকর্তা/কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যগণ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন এবং একজন কর্মচারী অকালে মৃত্যু বরন করেছেন। কিন্তু প্রবাসী ভাই-বোনদের সেবার স্বার্থে দুতাবাস একদিনের জন্যও বন্ধ করা হয়নি।

সুতরাং দুতাবাসের প্রতি আস্থা রাখুন এবং মুষ্টিমেয় কিছু স্বার্থানেষী সুবিধাবাদীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানিয়েছেন হাইকমিশনার গোলাম সারোয়ার।

Share This Article
Leave a comment