বিনোদন ডেস্ক:
পুষ্পা সিনেমাটি মূলত পুস্পা রাজ নামে এক ট্রাক ড্রাইভারকে নিয়ে, যার বেড়ে ওঠা ‘লাল চন্দন’ নামে বিরল এক কাঠের জঙ্গল আর সেই কাঠের চোরাচালানকে ঘিরে। ভীষন সাহসী, জেদি আর উচ্চাকাংখী পুস্পা সামনে এগিয়ে যেতে কাউকেই পরোয়া করে না। যেহেতু খুবই বিরল এবং দামি একটি জিনিসের চোরাকারবার আর সেটা ঘিরে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা, সেহেতু রাঘব বোয়াল থাকাটা স্বাভাবিক। কাঠুরিয়া পোশাকের পুষ্পা আর ফর্মাল পোশাকের পুলিশের এসপি, নির্বাচিত এমপি, সৎ ভাইদের অত্যাচার এবং ব্যবসার রাঘব বোয়ালদের ঠেঁকিয়ে ও ঠকিয়ে প্রেমিকা, মা এবং নিজের বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই মূলত ‘পুষ্পা- দ্য রাইজ’ সিনেমা।
২০০ কোটি রুপি বাজেটের স্টাইলে ভরপুর দক্ষিণী এ সিনেমাটির সাউন্ড, কোরিওগ্রাফি, কালার সহ অনেক ভালোলাগা বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় আমাকে খুব দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। সিনেমাটির এক পর্যায়ে নায়ক অল্লু অর্জুন সাধারণ কাঠুরিয়া অর্থাৎ শ্রমিক থেকে চন্দন কাঠের ব্যবসার শেয়ার হোল্ডার হলে, তখন নায়ক অল্লু নায়িকা রেশমিকা মান্দানাকে টাকা দিয়ে কিস করার অফার করে। নায়িকা সেটি গ্রহণও করে এবং তার বান্ধবীদের সাথে নিয়ে বনের ভিতরে নির্জন এক সেতুর উপরে একটি থ্রী হুইলারের মধ্যে শুরু করে তাদের কিসিং যুদ্ধ।
টাকা দিয়ে কিসিং অফারটি দেখে প্রথমে আমার খুব স্বাবাভিক মনে হয়েছিলো। মনে হয়েছিলো ভারতীয় ফিল্মে কিসিং দৃশ্য কোনো ব্যাপারই না, হয়তো রগরগে কোনো দৃশ্য হবে হয়তো। কিন্তু পরিচালক সুকুমার এই সিনেমায় শিখিয়ে দিয়েগেলো সাউথ ইন্ডিয়ান মুভির শরীর, ধর্ম, সাইকোলজিক্যাল এবং ইন্টেলেকচুয়াল রিজেকশনের ব্যাপারটার বিশালতা।
তিনি দেখিয়েছেন, একটা নারী কিভাবে বিবাহবহির্ভূত টুএক্সকে অর্থাৎ কিসিংকে টাকা ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধকে উর্ধে রেখে বিবাহের সময় স্বামীর প্রাপ্যকে প্রাধান্য দিয়ে ওই পরিবেশে থেকে কিভাবে ফিরে আসা যায়। যা সিনেমা প্রেমী দর্শক ও আমাদের সমাজের জন্য বিশাল এক শিক্ষণীয় বিষয়।
যদিও ফিল্মে ভিলেন থেকে নায়ক অল্লু অর্জুন তার নায়িকা রেশমিকা মান্দানা ও রেশমিকার বাবা সাধারণ শ্রমিক কাঠুরিয়াকে উদ্ধারের পর নায়ক অল্লুকে নায়িকা নিজেই কিস করে। তবুও ব্যাপারটা ইমরান হাশমি সহ অন্যান বলিউড নায়ক নায়িকাদের মত আপত্তিকর ছিলোনা।
আমার লেখার বিষয়টা যদিও কিসিং নিয়ে নয়, বিষয়টা নায়িকা কার সাথে কিস করছে, তার স্বামীর সাথে না কি, যে এখনো স্বামী হয়নি অর্থাৎ তার প্রেমিকের সাথে? আসলে এ ফিল্মের এ দৃশ্য আমাকে এটাই শিখিয়েছে যে, প্রত্যেক ধর্ম, সমাজের পবিত্র একটা কালচারাল বিষয় অর্থাৎ বিবাহ দ্বারা আমাদের সমাজকে কিভাবে শৃংখলাবদ্ধ রেখে শান্তিতে থাকা যায় সেটি।
পুষ্পা, দ্য রাইজ মূলত ২০২১ সালের একটি ভারতীয় তেলুগু ভাষার ক্রাইম অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা, যার রচনা ও পরিচালনা করেছেন সুকুমার। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন অল্লু অর্জুন, রশ্মিকা মন্দানা, ফাহাদ ফজিল, প্রকাশ রাজ ও জগপতি বাবু এবং প্বার্শ চরিত্রে অভিনয় করেছেন হরিশ উথামান, বেন্নেলা কিশোর এবং অনসূয়া ভরদ্বাজ।
বক্স অফিস কাঁপানো এ সিনেমাটির সঙ্গীতে সুর দিয়েছেন দেবী শ্রী প্রসাদ এবং চলচ্চিত্রটি মুত্তামশেট্টি মিডিয়ার সাথে মৈত্রী মুভি মেকার্সের অধীনে নির্মিত হয়েছে। একই সাথে তেলুগু, মালয়ালম, তামিল, কন্নড় এবং হিন্দি ভাষায় মুক্তি পেয়েছে ছবিটি।
লাল চন্দনের বেআইনি ব্যবসা এবং সিন্ডিকেট নিয়ে তৈরি অ্যাকশনধর্মী এই ‘পুষ্পা- দ্য রাইজ’ দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে শুটিং করা হয়েছে। সবুজে ঘেরা অরণ্য মনোমুগ্ধকর এই সিনেমাটি অল্লুর স্টাইল আর সংলাপ সবার মন কাড়লেও সবচেয়ে নজর কেড়েছে খরস্রোতা নদী আর লাল চন্দনের জঙ্গল অন্ধ্রপ্রদেশের মারেদুমিল্লি বনের দৃশ্য।
এখন পর্যন্ত বাক্স অফিসের ৩৫৪ কোটি রুপি যায় করা এ ফিল্মটিতে আসলেই মনোরম দৃশ্যের ছড়াছড়ি থাকলেও এবং ফিল্মটির নাম ও নায়ক অল্লুর নাম পুষ্পা অর্থাৎ ফুল হলেও সুকুমারের এ ফিল্মটি মূলত ফায়ার অর্থাৎ আগুনে ভর্তি। তাইতো ২ ঘন্টা ৫৯ মিনিটের এ ফিল্মটির মেইন ডায়লগ হচ্ছে, পুষ্পা ফ্লাওয়ার নয়রে ফায়ার!