মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালিত

কালের কলম
6 Min Read
চিত্র: আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে বক্তব্য রাখছেন, হাই কমিশনার মো: গোলাম সারোয়ার। ছবি: কালের কলম।

আহমাদুল কবির, বিশেষ প্রতিনিধি: 

‘শতবর্ষে জাতির পিতা, সুবর্ণে স্বাধীনতা, অভিবাসনে আনব মর্যাদা ও নৈতিকতা।’ স্লোগানকে সামনে রেখে মালয়েশিয়ায় পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। যথাযত মর্যাদায় বাংলাদেশ দূতাবাসে এ দিবসটি পালন করা হয়।

শনিবার মালয়েশিয়া সময় সকাল ১১টায় এ উপলক্ষে দূতাবাসে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারের চলমান বিধি-নিষেধের কারণে দূতাবাসের ফেসবুক পেজে লাইভে অংশগ্রহণ করেন প্রবাসীরা। সভার শুরুতে সকল প্রবাসী ও দেশের উন্নতি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

হাই কমিশনার মো: গোলাম সারোয়ারের সভাপতিত্বে ও শ্রম শাখার দ্বিতীয় সচিব ফরিদ আহমদের অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় সভায় রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন, শ্রম কাউন্সিলর মো: জহিরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন, শ্রম কাউন্সিলর ২ মো: হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডল, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন, পাসপোর্ট ও ভিসা শাখার প্রথম সচিব মিয়া মোহাম্মদ কিয়ামুদ্দিন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন, দ্বিতীয় সচিব ফরিদ আহমদ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন, দ্বিতীয় সচিব (রাজনৈতিক) বেগম রেহেনা পারভীন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে বক্তব্য রাখছেন, কাউন্সিলর শ্রম মো: জহিরুল ইসলাম।
চিত্র: আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে বক্তব্য রাখছেন, কাউন্সিলর শ্রম মো: জহিরুল ইসলাম। ছবি: কালের কলম।

আলোচনা সভায় হাই কমিশনার মো: গোলাম সারওয়ারের বক্তব্যের শুরুতে, সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করেন দেশের পরাধীনতার গ্লানি মোচনে প্রাণ উৎসর্গ করা বীরসন্তানদের।

তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন। সেইসঙ্গে জাতীয় চার নেতাসহ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শ্রদ্ধা জানান।

হাই কমিশার মো. গোলাম সারওয়ার প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে বলেন, পাসপোর্ট সেবা সহজীকরণ করার প্রক্রিয়া চলছে, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আরো দ্রুত পাসপোর্ট দেয়া হয় যাতে বৈধকরণ প্রক্রিয়ার সুযোগ নিতে পারেন। শত প্রতিকুলতার মাঝেও দূতাবাস পাসপোর্ট বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। দূর-দূরান্তে কর্মরত কর্মীদের, পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে দুই লাখ ৩০ হাজার পাসপোর্ট বিতরন করা হয়েছে।

হাই কমিশনার বলেন, বাংলাদেশের প্রবাসীদের মেধা, শ্রম ও দক্ষতা বিশ্বে প্রশংসিত। এ ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা সচেষ্ট আছি। বাংলাদেশ সরকার করোনা কালে প্রবাসেও কর্মীদের সহযোগিতা করেছে। একইসঙ্গে প্রবাসীরা দেশ এবং নিজ দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এ ছাড়া করোনাকালে সম্মূখ সারির কর্মী হিসাবে বাংলাদেশী কর্মীরা মালয়েশিয়ায় কাজ করছে এখনও করছে।

মালয়েশিয়ায় অনিয়মিত বাংলাদেশি প্রবাসীদের কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা আর্থিক লেনদেন না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে মালয়েশিয়া সরকার রিক্যালিব্রেশন নামে অবৈধ কর্মীদের বৈধ করার প্রক্রিয়াটি পুরোটাই নিয়োগদাতা বা মালিক নির্ভর। এ প্রক্রিয়ায় প্রায় ৯০ হাজার বাংলাদেশি বৈধতা নিয়েছেন। ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আরোও সময় বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সুতরাং কোনো এজেন্ট, দালাল বা তৃতীয় পক্ষের কিছু করার সুযোগ নেই। ফলে কারো প্রলোভনে প্রতারিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নতুন করে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে, বাংলাদেশ সরকার ও দূতাবাসের পরামর্শ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে আহবান জানিয়েছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে উপস্থিত দূতাবাসের কর্মকর্তা কর্মচারি বৃন্দ।
চিত্র: আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে উপস্থিত দূতাবাসের কর্মকর্তা কর্মচারি বৃন্দ। ছবি: কালের কলম।

হাই কমিশনার অভিবাসী দিবসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রবাসীদের সেবায় যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং করোনা কালে যারা সেচ্ছায় সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান।

সভায় তাৎক্ষণিক প্রবাসী শফিকুল ইসলাম ও আবির তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন এবং দূতাবাসের সেবার মান বাড়ানোর জন্য তারা অনুরোধ জানান।

শ্রম কাউন্সিলর মো: জহিরুল ইসলাম, শ্রম পরিস্থিতি সম্পর্কে তুলে ধরেন এবং আরও বলেন, আমরা মালিক পরিবর্তন করার সুযোগ করে দিয়েছি এবং সফল হয়েছি।

এই করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাঝে আমরা (দূতাবাস) কয়েক হাজার কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বেতনহীন কর্মী যেন ছাঁটাই না করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে করোনার মাঝে দেশে ফেরত গেলেও মালয়েশিয়া থেকে একজনকেও কাজ হারিয়ে দেশে যেতে হয়নি।

মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রত্যেক কর্মীকে বীমার আওতায় আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে দেশটির সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন (সকসো) কর্তৃক ২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫,০৬,১৬৩ জন বাংলাদেশি কর্মী সকসো’র মেম্বারশিপ লাভ করেছেন। ইতি মধ্যে ১৩ কোটি ১২ লাখ টাকার বীমা আদায় করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অস্থায়ী অক্ষমতাবরণকারী ৩১৭৮ জনকে ৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা, স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণকারী ৬৮ জনকে ৪ কোটি ২১ লাখ টাকা, ২১৯টি মৃতদেহ প্রেরণ বাবদ ২ কোটি ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। মার্চ ২০২১ থেকে ৩১ অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত কর্মক্ষেত্রে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত ৮৫০ জনকে ৯৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকার সমপরিমাণ অর্থ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া পাবনার দেলোয়ার মোল্লা দেশে থেকে দুর্ঘটনা জনিত সুবিধা পাচ্ছেন। তিনি এককালীন ৭ লাখ ৭ হাজার টাকা পেয়েছেন এবং আজীবন তিনি ৬৫০ রিঙ্গিত করে পাবেন। সিরাজগঞ্জের প্রামাণিক ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ পেয়েছেন।

গত এক বছরে ১৩০২ জন বাংলাদেশী মৃত্যু বরণ করেছেন। এর মধ্যে স্বাভাবিক মৃত্যুবরন করেছেন, ৮০২ জন, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৫০০ জন। এর মধ্যে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সরকারি খরচে কয়েকটি মৃতদেহ দেশে প্রেরণ করা হয়েছে। গত এক বছরে হাই কমিশন থেকে ৮,৩৯১ টি সাধারন ট্রাভেল পাস এবং ক্যাম্পে থাকা ১৭৮৬ জনকে ট্রাভেল পাস প্রদান করা হয়েছে বলেও শ্রম কাউন্সিলর জানান।

আলোচনা সভায়, ডেপুটি হাই কমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীর, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা কমডোর মোস্তাক আহমেদ, (জি), এনপিপি, পিএসসি সহ দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Share This Article
Leave a comment