আহমাদুল কবির, বিশেষ প্রতিনিধি:
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা কঠিন সময় পার করছেন। তবে, মালয়েশিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের সমস্যার ইতিবাচক সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। এরই ধারা বাহিকতায় মালয়েশিয়ায় আরোও ২১ জন বাংলাদেশি কর্মীর কাজের সুযোগ করে দিয়েছে দূতাবাস। নভেল করোনাকালীন সময়ে এ পর্যন্ত মোট ১৪ শ ৬৩ জন বাংলাদেশি কর্মীর কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
আব্দুল মান্নান সরকার ও মো. শাওন সরকার ২০১৮ সালে ইউনাইটেড এজেন্সির মাধ্যমে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়া এসেছেন। তারা যে কোম্পানিতে কাজ করতেন করোনার কারনে কোম্পানি মালিক পক্ষ চালাতে পারছেনা। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি কর্মীদের যার যার দেশে পাটিয়ে দেয়ার চিন্তা করছিল। তখনই আব্দুল মান্নানরা দূতাবাসে বিস্তারিত জানানোরপর দূতাবাসের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় অন্য কোম্পানিতে তাদের কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়। ১৬ মার্চ আব্দুল মান্নানসহ ২১ জন নতুন কোম্পানিতে কাজে যোগ দিয়েছেন। নতুন কাজ পেয়ে তারা খুশি।
এ দিকে করোনা পরিস্থিতিতে দুই দেশের অর্থনৈতিক, দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে কোনো বিরূপ প্রভাব যাতে না পড়ে এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের কোনো সমস্যা না হয় সবদিকে সতর্ক থেকে হাইকমিশন দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে।
মালয়েশিয়ায় করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় সফল হওয়ায় অর্থনীতি পুনরায় চালু করার চেষ্টা চলছে। গত বছরের মার্চের দ্বিতীয়ার্ধে কঠোর মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডার জারি করলে অতি আবশ্যক এবং জীবন রক্ষাকারী পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব বন্ধ থাকে। সে সময় বাংলাদেশি কর্মীরা এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছে করোনাযোদ্ধা হিসেবে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে মালয়েশিয়া সরকার কোম্পানি পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছে যা পূর্বে ছিল না। বিশেষ করে যেসব কোম্পানি করোনা পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিক মন্দা আক্রান্ত বা দেউলিয়া হয়েছে বা কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য সেসব কোম্পানিকে তাদের বিদেশি কর্মীদের একই সেক্টরে অন্য কোম্পানিতে ভিসা পরিবর্তন তথা পুনঃনিয়োগ করা হচ্ছে।
এজন্য হাইকমিশন, কর্মী, কোম্পানি এবং মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে, যাতে কাউকে কর্মহীন হয়ে দেশে ফিরে যেতে না হয় এবং বিষয়টি চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের এ সংক্রান্ত পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য সরাসরি হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়েছে। দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘কোম্পানি বা নিয়োগকর্তা পরিবর্তন, এবং অবৈধদের বৈধতা প্রদানের প্রস্তাব করলে মালয়েশিয়া সরকার গ্রহণ করে এবং ইতোমধ্যে কোম্পানি বা নিয়োগকর্তা পরিবর্তন চলছে।
এ ছাড়া বিদেশি কর্মী নিয়োগে শূন্য ব্যয় নীতির সুবিধা পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশি কর্মীরা। শীর্ষস্থানীয় গ্লোভস প্রস্ততকারক কোম্পানি ডব্লিউ আরপি, নাইট্রিটেকস, টপ গ্লোভস, হার্তালেগাসহ অনেক কোম্পানি বাংলাদেশি কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় ফেরত দিয়েছে। আরও বেশ কিছু কোম্পানি শূন্য অভিবাসন ব্যয় বাস্তবায়ন করবে বলে জানা গেছে।
হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, এই করোনাকালেও বাণিজ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই ভ্রাতৃত্বপূর্ণ দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে।
চলমান কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে গত ১১ প্রপ্রিল মালয়েশিয়া সরকারের মানব সম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানানের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. গোলাম সারোয়ার এক বৈঠক করেছেন।
দক্ষ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতির মাঝেও বৈধ-অবৈধ নির্বিশেষে বাংলাদেশি কর্মীদের করোনা চিকিৎসা, শ্রমিক পুনর্বাসন, কোম্পানি পরিবর্তন সুবিধা প্রদান এবং অবৈধ শ্রমিকদের বৈধকরণের ইতিবাচক সম্মতি প্রদান মালয়েশিয়ার সরকারের সুদৃষ্টির সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।