ধর্মীয় ডেস্ক | অনলাইন:
যদি কখনো কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা খুব স্বাভাবিকভাবে আমাদের মন খারাপ করে দেয় এবং এই মন খারাপের সময়কাল যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তখন সেটিকে ডিপ্রেশন বলে।
সাধারণত ডিপ্রেশন হলে মনে হয় বাস্তব জগতে আর না বেঁচে থাকতে, আত্মহত্যা করতে। কিছু কিছু মানুষের এই আত্মহত্যার ইচ্ছার মধ্যেও জন্ম নেয় কিছু কিছু অকল্পনীয় কাজ। এসময় আমাদের মনে উঁকি দেয় নানান ইচ্ছা। কেউ কেউ হতাশার এ সময় নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারেনা। পারেনা নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা শক্তির জাগরণ ঘটাতে। এসময়কার মন নানান কথা বলতে চেষ্টা করে। চেষ্টা করে নানা চিত্র আঁকতে। এমনই একটা সময়ের চিত্র এঁকেছেন ডিপ্রেশনে পড়া বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আঠাশর্ধো এক তরুণী। তার ভাষায়-
“ইচ্ছে হয়, অস্তিত্বহীন অবাস্তব কোনো এক কল্পনার জগতে ঢুকে পড়তে। যেখান থেকে আর কখনো বের হওয়া যায় না। চিৎকার করলেও আতঙ্কিত কণ্ঠ কারো মনে আঘাত করবেনা। যেখানে নেই কোনো মায়া, নেই কোনো ভালোবাসা, আছে শুধু একরাশ অন্ধকারের ঘনঘটা। সেখানে আলো জ্বালার মতো ভুলেও কোনো আগন্তুকের আগমন ঘটবে না কোনো দিন।”
ডিপ্রেশনে এমন সব অকল্পনীয় চিত্র বা কাজকর্ম সাধারণত সকল প্রকার মানুষের বেলায় হয়ে থাকে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে। এবং সেই আঙ্গিকেই নিজেদের সামলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সবাই, কিন্তু পারে কয় জন? এসময় আত্মহত্যার মত কাজও করে বসে অনেকেই। কিন্তু যারা মুমিন, মুসলমান তারা কিভাবে কাটাতে পারে তাদের ডিপ্রেশন বা হতাশার সময়গুলো? বলছি সে বিষয়ে-
আপনি একজন প্রাক্টিসিং মুমিন, মুসলিম। যে কোন কারণে আপনি ডিপ্রেশনে পড়লেন। মানে করছেন আপনার সবকিছু শেষ! আসলে এ শেষ আরও ৫/১০ জনের মত আপনারও শেষ নয়। আপনি আর ৫/১০ জন থেকে আলাদা। আপনার সব কিছুর জন্য একজন আল্লাহ আছেন আর ওদেরতো তা নেই।
এ সময় আপনার চিন্তা হবে নিজের উপর জুলুম করা নয়। মূলত এ সময় আপনার জন্য খুলে গেলো দুহাত ভরে কামানোর বন্ধ দুয়ার! মানে আপনি ইবাদতের বসন্তকালে উপনিত হলেন। এ সময় হলো আপনার, আপনার সৌভাগ্যের। কারণ আপনার রব সবাইকে পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করেন না। আপনি পরম সৌভাগ্যবান। এ ডিপ্রেশন দিয়ে আপনার রব আপনাকে পরীক্ষা করছেন। আপনি ইবাদাত করুন। কারণ এ সময় ইবাদতের।
এ সময়ের হাসিগুলো যখন আপনার থেকে হারিয়ে যাবে, কান্নাগুলো যখন বুক ফেটে ফেরিয়ে আসার আন্দোলন শুরু করবে, তখন উযু করে দুরাকাত নামাজ পড়ে নিন। নামাজ শেষে মনে করতে কষ্ট হবে আপনি শেষ কবে যে, এতো খুশু-খুযুওয়ালা নামাজ পড়েছেন তা মনে করতে? হাহাকারভরা হৃদয়ে যখন একবার ‘আল্লাহগো’ বলে ডাক দিবেন, নৈকট্যের সে যে কী মধুরতা, তা একমাত্র আপনিই অনুভব করতে পারবেন।
জানেনতো এ সময়ের কথাগুলো দিল থেকে আসে, আর দিলে গিয়ে লাগে। এ সময়ের চাওয়াটা অন্তর থেকে বেরোয়, সেটা তখন আরশে পৌঁছাতে খুব বেশি বেগ পায়না। কারণ দুআ যত গভীর থেকে আসে, কান্নাময় হয়, মকবুলিয়তের সম্ভাবনা তত বাড়তে থাকে। এক দিকে আপনার অশ্রু যত গড়ায়, অন্য দিকে আপনার রবে’র সাথে আপনার দূরত্ব তত কমতে থাকে। এমনি করে ন্যানো সেকেন্ডে আপনার আর্জি পৌঁছে যায় আপনার মহান রবে’র দরবারে। নাজুক হালতের এ দুআ অত্যন্ত আবেদনময় হয় বলেই সেখান থেকে আপনাকে ফিরতে হয় না খালি হাতে।
ডিপ্রেশনে পড়লে কুরআন তিলাওয়াত করুন। ডিপ্রেশনে কুরআন তিলাওয়াতে কী যে মাধুর্যতা অনুভব হয় সে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। সে সময়ের কুরআন তিলওয়াত হৃদয়ের প্রতিটি কোণে কোণে ছড়িয়ে দিতে থাকে সাকীনাহ, রহমতে সিক্ত করে দেয় অন্তরটা। মধুর সে অনুভুতি বাঁচার প্রেরণা দেয়। চোখের পানি যেন গোলাপ পানির ন্যায় বুকে টপটপ করে পড়ে জীবনের মধুময়তা নতুনভাবে উপলব্ধি করায়। নিজেকে তখন মনে হয় জান্নাতি মানুষ।
সাধারণত ডিপ্রেশনের সাথে গান, ড্রিঙ্কস ও স্মোকের রয়েছে বড় ধরণের সম্পর্ক। কেউ ছেড়েগেছে বলে বড় আফসোস করি, হতাশায় ভুগি। আর হতাশার এসময় আমরা গান শুনি, ড্রিঙ্কস করি, স্মোক করি এবং প্রেম ঘটিত বিষয় হলে সাথে সাথে আমরা নিজেদের হাত কাটি, রক্তঝরাই। আফসোস এবং এগুলো করা নির্বোধের কাজ। কারণ সবাই চলে গেলেও আপনার রব রয়েছে আপনার জন্য। আপনি তার দিকে মুখ ফিরান। গান শোনা, ড্রিকংস করা, স্মোক করা, হাত কাটা বন্ধ করুন।
মনে রাখতে হবে, গান ব্যথিত হৃদয়ে ছুরি বসায় আর জর্জরিত কলবে কুরআন মলম লাগায়। যে গান, ড্রিঙ্কস-স্মোক বেছে নেয়, তার কপাল পোড়ে। আর যে কুরআন গ্রহণ করে, সে প্রশান্তি পায়। সুতরাং আপনি দাঁড়িয়ে যান আপনার মহামহিম রবের দরবারে। কি হারালেন? আর কিই বা চান? বলুন, নির্দ্বিধায়। আপনার রব আপনার অন্তরে প্রশান্তি ঢেলে দেবেন। আপনাকে রহমতের বারিতে সিক্ত করবেন। অতঃপর আপনি আগের চেয়েও মধুর জীবন লাভ করবেন ইনশাল্লাহ!
মনে রাখবেন, দুনিয়া দুনিয়াই, জান্নাত জান্নাতই। যদি দুনিয়ায় দুঃখ-কষ্ট না থাকে, তবে কী পার্থক্য রইলো জান্নাত বা সুখ পাওয়ার মাঝে? কষ্ট আসবে, সইতে হবে। বিপদে পড়বে, মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু ইবাদাহ অর্থাৎ তার থেকে বিচ্যুতি হওয়া বা দূরে যাওয়া চলবে না। কারণ খোদার মোহাব্বতের মধুরতা যখন অন্তরে প্রবেশ করবে, মারেফাতের মহাদৌলত আপনার কলব যখন কবুল করবে, তখন আপনার দুঃখগুলোও শুকরিয়া আদায় করবে।
ভাবুনতো, সুখ কবে, কাকে এনেছে খোদার রাহে। তোমার রবের ভালোবাসার পথ নির্মিত কাঁটা দিয়ে। সে পথে হেঁটে যাও বার বার, নির্দ্বিধায় রক্তাক্ত করো তোমার অন্তরপদ। এরপর দেখো, কিছু পাও কি না? কারণ, দুঃখ যে তোমার রবের পক্ষ থেকে অনেক বড় নেয়ামত, সুখের চাবি!
✎..লেখা
উম্মে হাবিবা সুলতানা
ভয়েস আর্টিস্ট ও কনটেন্ট রাইটার।