আহমাদুল কবির:
কোভিড-১৯ নিয়ে চারদিকে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। তাই এই মুহূর্তে সবার আগে প্রয়োজন সংহতি। একই সঙ্গে ইতিহাসের সব থেকে বড় হুমকি কোভিড মোকাবিলায় প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছাও। সংকটকালীন এই সময়ে আমরা সবাই এখন একে অপরের প্রতিবেশী। সফলতা তখনই আসবে যখন বিশ্বের সব মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। সেন্টার ফর এনআরবির বছরব্যাপী আয়োজন ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজ-২০২০ এর সমাপনীতে অনুষ্ঠিত ভার্চ্যুয়াল কনফারেন্সে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেন এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, মহামারির কারণে বিমান চলাচল, পর্যটন, গার্মেন্ট, পরিসেবা, রেমিট্যান্সসহ সবধরনের ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এর কারণে বহু শ্রমিক তার জীবিকা হারিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির উন্নয়নে বেসরকারি খাত এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর বড় দায়িত্ব রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। কোভিড পরবর্তী সময়েও আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এ জন্য শুধু রাষ্ট্রগুলোই নয়, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বময় ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিযুক্ত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তার মতে, বহুরূপী করোনার সেকেন্ড ওয়েবে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী ও প্রবাসীরা হুমকির মুখে রয়েছেন। সর্বাগ্রে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
৭৫তম জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে ৩০ ডিসেম্বর বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত ‘পোস্ট প্যান্ডামিক ওয়ার্ল্ড ইকোনমি: নেসেসিটি অব টুগেদারনেস আন্ডার দ্য আমব্রেলা অব ইউএন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ব্রুকলিনস্থ হল রুম এবং ঢাকার ধানমন্ডিস্থ সিএনআরবি কনফারেন্সের হল রুম থেকে যৌথভাবে সম্প্রচার করা হয়। এতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গুরুত্বপূর্ণ অতিথিরা আলোচনায় অংশ নেন।
সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপারসন এমএস সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা ওই কনফারেন্সে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এনআরবি’র বোর্ড মেম্বার ব্যাংকার ইশতিয়াক এ চৌধুরী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও সেশনে অংশ নেনÑপরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান,সাবেক মন্ত্রী ফারুক খাঁন এমপি, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক মন্ত্রী আবদুল মঈন খান, প্রাক্তন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. আতিউর রহমান, ঢাকাস্থ জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ইউএসএআইডি’র প্রতিনিধি ডেভিড কোপার, আইওএম-এর মিশন চিফ জর্জিও জিগৌরি, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স-এসএসএফ-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মুজিবুর রহমান, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ ন. ম. মঞ্জুরুল হক মজুমদার, কাতার ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হাসান, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাশেম খান, বৃটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স (বিবিসিসিআই)-এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উপদেষ্টা শাহাগির বখত ফারুক, বিবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বশির আহমেদ, সানওয়ে ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার প্রফ.ড. সাঈদুর রহমান, ইউনিটেন ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ার প্রফ.ড.নওশাদ আমিন, দি-ষ্টার মালয়েশিয়ার সাব এডিটর এ্যালান পরিমল, প্রফ.ড. এনামুল হক (ইন্ডিয়), জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান, নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কমান্ডিং অফিসার ভিক্টোরিয়া পেরি, সাবেক ব্যাংকার হেলাল আহমেদ চৌধূরী, ট্রাষ্ট ব্যাংকের এমডি ফারুক মাঈন উদ্দিন, কোলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি ¯েœহাশীস সোর, তুরস্কের সাংবাদিক এমএস শামিম চৌধূরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপারসন সেকিল চৌধুরী তার সংগঠনের কার্যক্রম এবং বিদ্যমান কোভিড বাস্তবতা নিয়ে কথা বলেন। সেখানে তিনি বলেন, সেন্টারটি ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাতে প্রবাসীদের আগ্রহী করতে কাজ করে। একই সঙ্গে বাংলাদেশি নাগরিক ও দুনিয়াজুড়ে থাকা নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের (এনআরবি) দেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে থাকে। সেন্টার ফর এনআরবি বিশ্বাস করে নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি-এনআরবি এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশিরাই বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে ব্রান্ডিং করে। সেন্টারটি দেশে এবং দেশের বাইরে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠক করে থাকে। আর এ কার্যক্রমকে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী সব সময় উৎসাহিত করেন। করোনা মোকাবিলায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই মন্তব্য করে মিস্টার চৌধুরী জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরাঁকে উদ্ধৃত করেন। বলেন, তিনি এমনটাই বলে আসছেন।
সেন্টার ফর এনআরবি’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত আব্দুর রহীমের পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া কনফারেন্সের সূচনাপর্বে অনুষ্ঠানের শুভ কামনা জানিয়ে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ প্রদত্ত লিখিত বাণী পাঠ করেন এনআরবি’র ওয়াসেফ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ বার্তা পড়ে শোনান জালালাবাদ এসোসিয়েশন নিউ ইয়র্কের প্রেসিডেন্ট মঈনুল এইচ চৌধুরী, বিষয়ভিত্তিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোভিড-১৯ এর ধরন-প্রকৃতি বিষয়ক রিসার্চার প্রফেসর ড. তারেক আলম, কোভিড-১৯ এর মেডিসিন বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিউ ইয়র্কের ড. মাসুদুল হাসান, চাইল্ড অ্যান্ড মাদার হেলথ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বৃটেনের ড. জাকি রেজওয়ানা আনওয়ার। আয়োজকদের তরফে জানানো হয়, গুরুত্বপূর্ণ ওই অনুষ্ঠানের স্পন্সর ছিল টিসিবিএল গ্রুপ বাংলাদেশ আর লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়েছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট।