ডেস্ক রিপোর্ট:
‘নতুন আশায় নতুন পৃথিবী: জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশ’ শীর্ষক কনফারেন্সে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ এম এ মোমেন প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করে কনফারেন্স এর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের বাংলাদেশ প্রধান মিয়া সেপ্পো এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর মিলার। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মূল আলোচনা উপস্থাপন করেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ডক্টর জাহিদ হোসেন। নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জসিম উদ্দিন এবং বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড সধহঁভধপঃঁৎবৎং’ অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি জনাব ফারুক হাসান। অনুষ্ঠানে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বক্তব্য রাখেন কর্মকর্তা এনওয়াই পিডি কর্মকর্তা ওয়ালটনসং।
এছাড়া আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখেন ভিয়েতনামে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ, ইউএনডিপি কান্ট্রি ইকোনমিক নাজনীন আহমেদ, ইউএসএআইডি প্রোগ্রাম ইকোনমিস্ট ডেভিড কাওপার, বাংলাদেশের এনআইডি কার্ড প্রজেক্ট এর প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাসেম ফজলুল কাদের, করোনা বিষয়ক সহযোগিতা কার্যক্রমের বিষয়ে বক্তব্য রাখেন আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি ডক্টর জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ব্রনাই হালাল ফুড অথোরিটি প্রধান কর্মকর্তা নুর রহমান, সেন্টার ফর এনআরবি’র বোর্ড সদস্য ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী।
সেন্টার ফর এনআরবি চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত ও সঞ্চালিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে আশা। দুটি বিষয়ে আশাব্যঞ্জক আলোচনা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা এবং রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান ও আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা। এ বিষয়গুলো দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির জন্য প্রয়োজন।পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদের আরো ব্যাপকভাবে দেশের কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি মশিউর রহমান বলেন, প্রবাসীদের অর্জিত আয় দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। করোনাকালে প্রবাসীদের জীবিকা সংকটে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের উপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো আজ ক্ষতির সম্মুখীন। তাই অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষার স্বার্থে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
অনুষ্ঠানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে ২০১৯ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৯০০ কোটি ডলারের বেশী। বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আগ্রহ ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি পিপিই যুক্তরাষ্ট্রকে উপহার হিসেবে প্রদান করায় তিনি বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘের আবাসিক প্রধান তার বক্তৃতায় বলেন, সেন্টার ফর এনআরবি’র কার্যক্রমে তিনি খুবই উৎসাহিত বোধ করছেন। এবং তিনি আরো বলেন, অতীতেও আমি এই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭৬ তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যে পুরস্কার পেয়েছেন তা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বীকৃতির স্মারক। জাতিসংঘের কার্যক্রম ব্যাপারে সেন্টার ফর এনআরবি’র উদ্যোগে তিনি উৎসাহিত বোধ করছেন এবং জাতিসংঘের কাছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, বিশ্বব্যাপী উন্নত এবং অনুন্নত দেশের করোনাকালীন সহায়তার একটি সমন্বয় জরুরি। নাজনীন আহমেদ তাঁর বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘ একই সুতায় কাজ করা অনেক জরুরী এবং তিনি সেন্টার ফর এনআরবি’র উদ্যোগটিকে একটি আন্তর্জাতিক প্রয়াস হিসেবে উল্লেখ করেন।
বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান তার বক্তৃতায় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদান, তাদের কার্যক্রম এবং এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা কামনা করেন। তিনি বলেন, এই সকল প্রবাসীরা দেশের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন, তিনি বেশি করে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য প্রবাসীদের প্রতি এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান।
স্বাগত বক্তব্যে সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপারসন ও কনফারেন্সের সভাপতি এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা আজ ইউএনজিএ সাইডলাইন কনফারেন্সে উপস্থিত হয়েছি এটি আমাদের জন্য একটি ভাগ্যের বিষয়। তিনি বলেন, বিশ্বের নানান রীতি পরিবর্তিত হয়েছে, কাজের পরিস্থিতি, বাচ্চাদের স্কুল যাওয়া আসা এবং ব্যবসার নীতিমালায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আমাদের নীতি গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই নতুন পৃথিবীর আলোকে আমাদের নেতৃবৃন্দকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি দেশকে একে অন্যকে সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। করোনা বিশ্বকে একটি সত্যিকারের গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত করেছে । এক দেশের বিপর্যয় অন্য দেশের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং কাউকে ফেলে রেখে নিজেকে নিরাপদ করা সম্ভব নয়। জাতিসংঘের উচিত হবে আরও বলিষ্ঠভাবে বিশ্বব্যাপী দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসা। তিনি বাংলাদেশ জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে এর গতি আরো বৃদ্ধি করার আহ্বান জানান। প্রবাসী বাংলাদেশীদের ব্যাপারে সেকিল চৌধুরী বলেন, বিশ্বের ১৬২ দেশে ১৪ মিলিয়ন বাংলাদেশি কর্মী বাহিনী রয়েছেন যারা বিশ্বের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন, এখন প্রয়োজন নতুন পৃথিবী এবং নতুন পরিবেশের আলোকে তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং তাদের জন্য উপযুক্ত কর্মক্ষেত্র নিশ্চয়তা প্রদান করা। তিনি আশা করেন এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশ সমূহ এবং জাতিসংঘের সংস্থাগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশের প্রস্তুতি এবং কার্যক্রম সম্পর্কে সেকিল চৌধুরী বলেন, কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে অর্থনীতি এবং বিজ্ঞান কে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যাতে ১৬০ মিলিয়ন মানুষের অন্ন বস্ত্রের ব্যবস্থা এবং তাদের জন্য ভ্যাকসিন সংগ্রহের কাজ বাংলাদেশ অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে করে যেতে পারে। তবে এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমূহের সহযোগিতা প্রয়োজন।
তাছাড়া তিনি আরো বলেন, এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে এটি বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। তিনি এ বিষয়ে তাদের সুস্থ এবং সুন্দর প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বলিষ্ঠ ভূমিকা কামনা করেন। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বব্যাপী যেসব জায়গাতে মানুষ ঘরছাড়া হচ্ছে অথবা নানান কারণে মানুষ বিতারিত হচ্ছে তাদের ব্যাপারে জাতিসংঘের সংস্থা সমূহের নেতৃত্বে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করা দরকার, তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়কে এই নতুন নতুন পৃথিবীর নতুন যে পরিকল্পনা এগুলো নিয়ে ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রমে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, প্রবাসী বাংলাদেশী এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন এবং অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন দেশ থেকে ডিপ্লোমেটিক প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।