আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া:
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বের ৫০ বছর ‘মৈত্রী দিবস’ উদযাপিত হয়েছে। ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং ভারতীয় হাইকমিশন যৌথভাবে ৫০তম বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবসের আয়োজন করে। কুয়ালালামপুরের স্থানীয় হোটেলে উভয় দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়, কেক কাটা, উভয় দেশের হাইকমিশনারের বক্তব্য প্রদান এবং বাংলাদেশ ও ভারতের শিল্পীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হয়। অনুষ্ঠানে মালয়েশিযা সরকারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক স্পেশ্যাল এনভয় তান শ্রী ভিগনেস্মরণ এবং মানব সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার হাজী আওয়ান বিন হাশিম, সংসদ সদস্য টেরেসা কোক, কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, মিডিয়া, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং বাংলাদেশ ও ভারতের প্রবাসী নাগরিকগণ অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে উভয় দেশের বন্ধুত্বের উপর নির্মিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করে। আরো ছিল মৈত্রী দিবসের স্মারক উপহার।
বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোঃ গোলাম সারোয়ার অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে জন্ম শতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তির মুহূর্তে এ ৫০ তম মৈত্রী দিবস উদযাপন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ যা দু’দেশের সম্পর্কে নবমাত্রা ও নবোদ্যম যোগ করেছে। তিনি বলেন শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধে নয় দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি স্থাপনে এবং সার্বিক উন্নয়নে উভয় দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান আর্থসামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আমরা বন্ধু ভারতকে স্মরণ করছি। এ ধরনের সুন্দর বন্ধুত্ব সবসময় অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ভারতীয় হাইকমিশনার বি এন রেড্ডি তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে আজ অবধি ভারত বাংলাদেশের জনগণের সাথে রয়েছে। ভারত বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম বাণিজ্য, উন্নয়ন ও শান্তির সহযোগী। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নতিতে অবদান রাখতে পেরে ভারত গর্বিত। তিনি বলেন, বর্তমানে উভয় দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সোনালী অধ্যায় রচিত হয়েছে। উভয়ে বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অর্থনীতি, অবকাঠামো, যোগাযোগ, সংস্কৃতি, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, এনার্জি, শিক্ষা, ব্লু ইকোনমি এবং ইনোভেশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশের শরনার্থীদের আশ্রয় দেওয়া, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার পরিচালনা, আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণসহ নানাভাবে সহযোগিতা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারত ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বিশ্বে প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়ে অনন্য নজীর স্থাপন করার দিনটিকে স্মরণ করতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রি দিবসের আয়োজন।
এ বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশ সফরকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ ডিসেম্বরকে ‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে একত্রে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দু-দেশের ৫০ বছরে বন্ধুত্বের স্মরণে বিশ্বের ১৮টি প্রধান শহরে যৌথভাবে মৈত্রী দিবস উদযাপন করছে। উভয় দেশ অভিন্ন মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা ও সমঝোতার ভিত্তিতে বন্ধুত্বকে আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।