সাব্বির ফকির, খুলনা:
খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের রূপসা রেল সেতুর কাজ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে কাজ। একের পর এক পিলার উঠছে। ইতিমধ্যে স্প্যান বসানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়। এখন চলছে রূপসা নদীতে সেতুর ৭২ ও ৭৪ নম্বর পিলারের (পায়ার) পাইলিং কাজ চলমান। দুই মাসের মধ্যে সেতুর সর্বশেষ ৭৩ নম্বর পিলারের কাজ শুরু হবে। এরপর নদীর মধ্যে নির্মিত পিলারের ওপর গার্ডার (দুই পিলারের মাঝখানে সংযুক্ত স্থাপনা) বসানো হবে। চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে রেলসেতু প্রকল্পের শেষ হওয়ার কথা বলছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। পরে ২০১২ সালের নভেম্বরে প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়ি জেভি প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেল সেতুর পাইলিংয়ের কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ তোফাজ্জেল হোসেন।
খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। একটি রেল সেতু, অপরটি রেললাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। খুলনার ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন হচ্ছে। স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদ নগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মোংলা। খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেললাইনের জন্য এক হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ এবং সেতুর জন্য এক হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বাকি টাকা জমি অধিগ্রহণে ব্যয় করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় রেলপথটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। য়াশেষে ২০২০১ সালের মধ্যে খুলনা ও মোংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে সারা দেশের রেল যোগাযোগ।
২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেল সেতুর পাইলিংয়ের কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃতোফাজ্জেল হোসেন। সচিবের উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে রূপসা রেলসেতু য়াশুরু হয়। প্রকল্পটি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেতুর শেষ হওয়ার কথা ছিল কিন্ত বৈশ্বিক মহামারী করোনার ফলে নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়। প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম জানান, ৫ দশমিক ১ কিলোমিটার রেলসেতুর মধ্যে রূপসা নদীর খুলনা প্রান্তে স্থলভাগের অংশের (ভায়াডাক্ট) ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর স্থলভাগে মোংলা প্রান্তে শুরুর অংশে পাইলক্যাপের (অ্যাবার্টমেন্ট) কিছু কাজ বাকি রয়েছে। দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ অংশের কাজ শেষ হতে আরও দুই মাস সময় লাগবে।
জানা যায়, সেতুর মোট ১৩৪টি পিলারের মধ্যে স্থলভাগে ১৩০টির য়াশেষ হয়েছে। নদী অংশে চারটি পিলারের মধ্যে শেষ হয়েছে ৭১ নম্বর পিলারের কাজ। চলমান ৭২ ও ৭৪ নম্বর পিলারের কাজ শেষ হলে ৭৩ নম্বর পিলারের কাজ শুরু হবে। নদী অংশে সেতুতে ৬৯ নম্বর পিলার থেকে ৭৬ নম্বর পিলার পর্যন্ত প্রতিটি ৩২ মিটার দৈর্ঘ্যরে সাতটি গার্ডার থাকবে। এরই মধ্যে ভারত থেকে একটি গার্ডার আনা হয়েছে। বাকি ছয়টি গার্ডার আনার প্রক্রিয়া চলমান। প্রকল্প কর্মকর্তাদের দাবি, রেলসেতুর য়াশেষ হলে চলতি বছরের মধ্যে মোংলা বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে সারা দেশের রেল যোগাযোগ। অর্থনীতিবিদদের মতে, এ অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন মোংলা বন্দর পুরোপুরি সচল হবে। শিল্পনগরী খুলনা ফিরে পাবে হারানো ঐতিহ্য। খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস বলেন, ‘খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু হলে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণের পাশাপাশি খুলনা-মোংলা রেলপথ তৈরি হলে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণসঞ্চার হবে। খুলনা-মোংলা রেলপথ, পদ্মা সেতু, মোংলা বন্দর, ভৌত অবকাঠামো সব মিলিয়ে এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক ঊর্ধ্বমুখী অবস্থার সৃষ্টি হবে।