আহমাদুল কবির, বিশেষ প্রতিনিধি:
করোনা পরিস্থিতির কারণে বহুমাত্রিক সংকটে প্রবাসীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, আবার কবে তারা কাজে যোগ দিতে পারবেন বা আদৗ পারবেন কী না জানেন না কেউ। নিয়োগকর্তারাও সুষ্পষ্ট করে কিছু বলছেন না।
কীভাবে পরিবার নিয়ে সামনের দিনগুলোতে চলবেন সেই দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। দেশে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা যেখানে ফের বিদেশে যাওয়ার চিন্তায় মগ্ন, তখন বিদেশে থাকা প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন বহুমাত্রিক সংকটে। কাজ নেই কীভাবে নিজের খরচ চালাবেন, কীভাবেই বা পরিবারকেই টাকা পাঠাবেন সেই চিন্তায় আছেন তারা। চলমান করোনা ভাইরাস কোটি বাংলাদেশি প্রবাসীর জীবনকে অনিশ্চতায় ফেলেছে। কারো বেতন নেই, কারো কমেছে। কেউ বা কাজ হারাচ্ছেন।
বিদেশ ফেরত অভিবাসী কর্মীদের জীবন ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব’শীর্ষক জরিপে জানা যায়, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির সময়ে দেশে ফেরত আসা অভিবাসী কর্মীদের ৮৭ শতাংশেরই কোনও আয়ের উৎস নেই ৭৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা এখন প্রচন্ড দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন ৩৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের নিজেদের সঞ্চয় বলতে এখন আর কিছু নেই ৯১ শতাংশ বলেছেন, তারা সরকারি বা বেসরকারি কোন সহায়তা পাননি।
এমন পরিস্থিতিতে গত ৭ মার্চ বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব অব মালয়েশিয়ার নিয়মিত আয়োজন ‘মালয়েশিয়ায় নতুন করে বৈধতা ও ছুটিতে থাকা প্রবাসীদের বাস্তবতা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তাদেরে পাশে থাকার আহবান জানিয়েছেন আলোচকরা। পাশাপাশি আলোচকদের দাবি, যারা ছুটিতে রয়েছেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে অনেকেই কর্মস্থলে ফিরবেন। সে সময় সরকারি খরচে যেন তাদের পাঠানো হয়। এ ছাড়া অভিবাসীদের দালালদের প্রতারণা থেকে সুরক্ষায় নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এবং বৈধ কোম্পানিতে শ্রম অভিবাসন নিশ্চিত করতে হবে। যাতে প্রত্যেক অভিবাসী শ্রমিক বিদেশের মাটিতে প্রতিশ্রুত চাকরি বেতন এবং আবাসন ও বিমা সুবিধা পায়।
আলোচকরা বলেন, নিয়োগকারী কোম্পানি কোনো অভিবাসী শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় প্রতিকার বিধান করতে হবে।
প্রেস ক্লাবের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর সঞ্চালনায় ভার্চেয়াল আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সী বায়রার যুগ্ন-মহাসচিব, এডভোকেট সাজ্জাদ হোসাইন সোহেল, দৈনিক বাংলাদেশের খবরের কূটনৈতিক প্রতিবেদক মোঃ রবিউল হক, যমুনা টিভির নিউজ রুম এডিটর অমিত হাসান রবিন, অল-ইউরোপিয়ান প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি আবু তাহির, মালয়েশিয়া প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি আহমাদুল কবির।
আলোচকরা বলেন, মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার যে সুযোগ দিয়েছে এই প্রক্রিয়া খুবই সহজ। সরাসরি ইমিগ্রেশনের তত্ত্বাবধানে। কারণ গত বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় তিনটি ভেন্ডরকে দায়িত্ব দেয়ায় বিদেশি কর্মীরা প্রতারিত হয়েছে। এবার কোনো ভেন্ডর না থাকায় প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। যদি কোন ধরনের সন্দেহ বা সমস্যা হয় সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহায়তা নিতে প্রবাসীদের আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় গত বছরের মার্চ মাস থেকেই করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ন্ত্রণে লকডাউনসহ বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় অনেকেই ছুটিতে গিয়ে আর ফিরে আসতে পারেননি কর্মস্থলে। তবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আবার দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই বিষয়ে দু’দেশের সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।