আহমাদুল কবির, বিশেষ প্রতিনিধি:
ভাগ্য পরিবর্তন করতে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন তেরা মিয়া (৪৯)। তেরা মিয়ার স্বপ্ন ছিল সেখানে গিয়ে কিছু একটা করবে। নিজের ছেলে-মেয়েকে ভালো কলেজে পড়ালেখা করাবে। কিন্তু সব স্বপ্ন তার নিমিষেই উবে গেল। তার আর ভাগ্যের পরিবর্তন হলো না। অবশেষে হুইল চেয়ারে করে দেশেই ফিরতে হলো তাকে।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের মৃত উমর আলীর ছেলে তেরা মিয়া ২০১৮ সালে দালালের প্ররোচনায় সমুদ্রপথে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে বৈধ হতে বিভিন্ন জনের কাছে টাকা দিয়েও বৈধ হতে পারেননি। অবৈধ গ্লানি মাথায় নিয়ে তেরা মিয়া লুকিয়ে লুকিয়ে কাজ করলেও করোনাকালে জুটেনি তার কাজ। এমতাবস্থায় কাজ না থাকায় নানা কারণে ভেঙে পড়েন তেরা মিয়া। ঘরে বসেই দিন কাটছিল তার। এতে তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, দেখা দেয় বিভিন্ন রোগ।
আগস্টের শেষদিকে একজন শুভাকাংখীর সহায়তায় সুঙ্গাইভুলু হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসা চলে টানা দেড় মাস। অক্টোবরের প্রথম দিকে ডাক্তার বলেন তার কিডনিতে পাথর ধরা পড়েছে, অপারেশন করাতে হবে। অপারেশন করতে হলে তার অনেক টাকার প্রয়োজন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তেরা মিয়ার বিষয় নিয়ে স্থানিয় একটি ইসলামিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করলে, সংস্থা যোগাযোগ করে বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব অব মালয়েশিয়ার সভাপতি মনির বিন আমজাদের সঙ্গে। মনির বিন আমজাদ হাসপাতালে চিকিৎসারত তেরা মিয়ার খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। তাকে সুস্থ করে তুলতে দায়িত্ব নিলেন মনির বিন আমজাদ। তার সাথে যুক্ত হন, মালয়েশিয়াস্থ জালালাবাদ এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।
এরই মাঝে তেরা মিয়া জানালেন, তিনি মালয়েশিয়ায় অপারেশন করাবেন না, দেশে চলে যাবেন। সিদ্ধান্ত হয় দেশে পাঠানোর। দেশে পাঠাতে হলে দরকার ট্রাভেল পাস। যেহেতু তেরা মিয়ার পাসপোর্ট নেই তাকে দেশে পাঠাতে হলে অবশ্যই হাইকমিশনের সহায়তা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে হাসপাতাল থেকে হাইকমিশনের লেবার কাউন্সিলর (২য়) হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডলের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে ফোন করা হয়। বিস্তারিত তাকে অবগত করা হয় তেরা মিয়ার বিষয়ে। হেদায়েতুল ইসলাম মন্ডল তেরা মিয়ার নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করা জন্য দায়িত্ব দেন মিশনের কল্যাণ সহকারি মকছেদ আলীকে। মকছেদ আলী ছুটেযান হাসপাতালে। যাচাই বাছাইয়েরপর তার নামে ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হয়।
বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব অব মালয়েশিয়ার সভাপতি মনির বিন আমজাদের আর্থিক সহায়তায় বিমান বন্দরে প্রশাসনিক সকল প্রক্রিয়া শেষ করে রবিবার ১৭ অক্টোবর মালয়েশিয়া সময় বেলা ৩ টায় ইউ এস বাংলা এয়ার লাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশে ফিরলেন তেরা মিয়া। এয়ার লাইন্সে তেরা মিয়াকে তুলে দিতে সার্বক্ষণিক সাথে ছিলেন, হাইকমিশনের কল্যাণ সহকারি মকছেদ আলী।
এ বিষয়ে প্রেস ক্লাব অব মালয়েশিয়ার সভাপতি মনির বিন আমজাদ এ প্রতিবেদককে জানান, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফেলে প্রায় এক সপ্তাহ ছোটাছুটি করে তেরা মিয়াকে দেশে পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। বিদেশের মাটিতে যার যার স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে দূতাবাসের পাশাপাশি অসহায় প্রবাসীদের সেবা দেয়া হলে আমাদের মুখ উজ্জ্বল হবে।
এ দিকে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব অব মালয়েশিয়ার সভপাতি মনির বিন আমজাদের মানবিক সহায়তার ভূয়সী প্রশংসা করেন, জালালাবাদ এসাসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।